রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০১০

লটকন ফল


'লবণসহিষ্ণু দুই ধান উৎপাদন বাড়াবে ৪০ লাখ টন'

'লবণসহিষ্ণু দুই ধান উৎপাদন বাড়াবে ৪০ লাখ টন'




মহসীনুল করিম
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সাতক্ষীরা, এপ্রিল ২৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম)- উচ্চ ফলনশীল ধানের লবণসহিষ্ণু দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা তারা বলছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে এ ধানের আবাদ বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন বাড়াবে


বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত এ ধান জাত দুটি সাতক্ষীরার বিনেরপোতা খামারে পরীক্ষামূলক চাষের পর সোমবার কাটা হয়েছে


নতুন জাতের এ ধানের ফলন প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন হবে জানিয়ে এর উদ্ভাবক বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমি এ ধান চাষের আওতায় আনলে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য বেশি উৎপন্ন হবে

ধানের জাত দুটির নাম 'বিনা-৮' ও 'বিনা-৯' করার প্রস্তাব করেছে বিনা

ড. মোফাজ্জল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এমন একটি ধানের স্বপ্ন ছিলো উপকূলের লাখ লাখ কৃষকের যা টিকে থাকবে উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততায়ও এ জাতের ধান ১০ ডেসি সিমেন (ডিসি) মাত্রার লবণাক্ততাসহিষ্ণু হবে"

বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম রইসুল হায়দার জানান, দেশে বর্তমানে অতি মাত্রার লবণাক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর আরো ১৫ লাখ হেক্টর জমি সীমিত মাত্রার লবণাক্ত এসব জমিতে বোরো বা শুষ্ক মৌসুমে ৪-২০ ডেসি সিমেন/মিটার (ডিসি/মিটার) মাত্রার লবণাক্ততা থাকে

কৃষি স�প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অনাবাদি জমির পরিমাণ প্রতি বছরে ৬৫ হাজার হেক্টর করে বাড়ছে এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ করে কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে বেশি লবণসহিষ্ণু ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করবে


আমন মৌসুমের জন্য এর আগে উদ্ভাবিত ব্রি-৪০ ও ব্রি-৪১ এবং বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি-৪৭ এর লবণ সহিষ্ণুতা কম জমিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে সর্বোচ্চ ৬ ডিসি/মিটার মাত্রাসহিষ্ণু ব্রি-৪০, ৪১ ও ৪৭ এর ফলন অনেক কমে যায়

বিনার গবেষকরা বলছেন, নতুন উদ্ভাবিত জাত দুটির ফলন হবে ৮-১০ ডেসি সিমেন/মিটার লবণাক্ত জমিতে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন এবং স্বাভাবিক জমিতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ টন


জাত দুটি আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় বোরো ও আমন উভয় মৌসুমে চাষের উপযোগী বোরো মৌসুমে ১৩০-১৩৫ দিনে এবং আমন মৌসুমে ১২০-১২৫ দিনে পাকে


কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ১০ লাখ হেক্টর জমিকে বোরো চাষের আওতায় আনা যাচ্ছে না বিনা উদ্ভাবিত নতুন জাত দুটি অবমুক্ত করা হলে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ অর্থাৎ ৩ লাখ হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং লবণাক্ত এলাকায় এ জাত দুটির গড় ফলন দাঁড়াবে প্রায় ৫ টন যাতে হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৫ টন চাল পাওয়া যাবে এ হিসেবে অতিরিক্ত ১০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হবে


এছাড়া বর্তমানে মধ্যম লবণ মাত্রায় প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে এ সব এলাকায় লবণাক্ততার কারণে গড়ে প্রায় হেক্টর প্রতি দেড় থেকে ২ টন ধান উৎপাদিত হয় বিনা উদ্ভাবিত জাত দুটি চাষ করলে হেক্টর প্রতি গড়ে ৫ টনেরও বেশি ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী গবেষকরা সে ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ১০ টন ধান উৎপাদিত হবে


শুধু সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার লবণাক্ত এলাকায় অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা বৃহত্তর বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম জেলার লবণাক্ত এলাকায় এ জাতের চাষ করলে সার্বিকভাবে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ লাখ টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিনার কর্মকর্তারা


ড. মির্জা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে দুটি জাতের ২ টন বীজ উৎপাদন হতে পারে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কে জাত দুটির বীজ সরবরাহ করা হবে


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমকে/জেবি/এমআই/১৩২৫ ঘ.