শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

বন্যা সহিষ্ণু ধান পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ

বন্যা সহিষ্ণু ধান পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ

নতুন উদ্ভাবিত বন্যা সহিষ্ণু তিন প্রজাতির ধানের পরীক্ষা নিরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন বাংলাদেশের গবেষকরা৷ তারা বলছেন, সফলভাবে এ ধান প্রবর্তন করা গেলে প্রতিবছরের বন্যা মোকাবিলা করে ভাল ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা৷

বাংলাদেশের প্রায় ২০ ভাগ অঞ্চল প্রতিবছর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এবং সাধারণ প্রজাতির ধানগুলো বন্যার পানির নীচে ৩ দিনও টিকে থাকতে না পারার কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ টন ফসলহানির শিকার হয় চাষিরা৷

রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)-এর কর্মকর্তারা আশা করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিকূল প্রকৃতির মোকাবিলা করতে এসব ধান লক্ষ লক্ষ চাষিকে সহায়তা করবে৷

গবেষকরা বলছেন, এসব ধান টানা ১৫ দিন পানির তলায় ডুবে থাকলেও মরে যাবে না৷ অর্থাৎ বন্যা উপদ্রুত বাংলাদেশে প্রতি বছরের অনেক বন্যাতেই টিকে থাকতে পারবে এই প্রজাতির ধান৷

ঢাকার অদূরে অবস্থিত বিআরআরআই এর কর্মর্তারা জানিয়েছেন, সরকার খুব শিগগিরই এ ধান অনুমোদন করবে এবং আগামী মৌসুমেই চাষিরা এর আবাদ শুরু করতে পারবে৷

বিআরআরআই এর প্রধান গবেষক খন্দকার ইফতাখার উদ্দৌলা বলেন, ‘‘প্রতিবছরের বন্যায় প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়৷ আমরা যদি এর মধ্য দিয়ে হেক্টরপ্রতি এক বা দুই টনও বেশি ফসল পাই তাহলে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের বিবেচনায় স্থায়ীভাবে স্বনির্ভর দেশের আরও কাছাকাছি চলে আসবে৷''

গবেষকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে আরও অবনতিশীল অবস্থার দিকে যাবে৷ এ পরিস্থিতিতে ধানের ফলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷

ইফতাখার উদ্দৌলা বলেন, ‘‘ধান বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ৷ জনগণ খাদ্য ক্যালরির প্রায় ৭০ ভাগই পায় ধান থেকে এবং দেশের চাষিদের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে৷''

গবেষকরা জানান, ‘বিআর-১১ সাব ১', ‘স্বর্ণা সাব ১' এবং ‘আইআর-৬৪' নামের এই তিন প্রজাতির ধান ম্যানিলা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এগুলো পানির তলায় ১৭ দিনও টিকে থেকেছে৷

এরমধ্যে ‘স্বর্ণা সাব ১' ইতোমধ্যেই ভারতে সফলভাবে আবাদ হচ্ছে৷ বাকি দুটো ধান বাংলাদেশে বহুল আবাদ হওয়া প্রজাতির ধান ব্যবহার করে উদ্ভাবিত হয়েছে৷

এই গবেষকরা ধানের জিনগত পরিবর্তন না করেও সঙ্করায়নের মাধ্যমে কয়েক প্রজাতির সাধারণ ধানের মধ্যে বন্যাসহিষ্ণু জিন সৃষ্টি করতে পেরেছেন৷ আইআরআই এর তত্ত্বাবধানে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশকে তহবিল যুগিয়েছে৷

এছাড়াও লবণাক্ত পানিতে ধানের ফলন নিয়ে গবেষণাতেও অগ্রগতি সাধন করেছেন বাংলাদেশের গবেষকরা৷ সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ আবাদি জমি ইতোমধ্যেই হুমকির মুখে পড়েছে৷

এই সেপ্টেম্বর মাসের আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্যানুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে আগামী দশকগুলোতে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ চরম হুমকির মুখে পড়বে৷ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন এতে লবণাক্ত পানি দেশের আরও অভ্যন্তরে চলে যেতে পারে এবং তার ফলে ধানসহ অন্যান্য প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ৷

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

আসছে আফ্রিকার ধান ‘নিরিকা’

আসছে আফ্রিকার ধান ‘নিরিকা’
আফ্রিকার কৃষি অর্থনীতি বদলে দেয়া ধান নিউ রাইস ফর আফ্রিকা (নিরিকা) এখন আবাদ হবে বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যে এ ধানের পরীক্ষামূলক আবাদ করে সুফল পাওয়া গেছে আচিরেই কৃষকদের মাঝে আবাদের জন্য এ ধান বীজ সরবরাহ করা হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (ডিএডিসি) কাছে বর্তমানে ১ টন নিরিকা ধানের বীজ মজুদ আছে বলে সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন একটি জাতের ধান আবাদে সুফল পাওয়ায় সম্প্রতি নিরিকা-২, নিরিকা-৩, নিরিকা-৪ এবং নিরিকা-১০ নামে আরো চারটি নতুন জাতের ধান বাংলাদেশে আনা হয়েছে

বিএডিসির সদস্য পরিচালক ( বীজ ও উদ্যান) মোঃ নূরম্নজ্জামান বলেন, এক সময় আফ্রিকাকে অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি করতে হত আবাদযোগ্য তেমন জমিও ছিল না কিন্তু সে দেশের কৃষি বিভাগ ‘নিরিকা’ নামে একে একে ৭৮টি নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবন করে সে দেশের কৃষি অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে সব সময়ই জমিতে ধান দেখা যায় ওই দেশে এখন তারা চাল রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এ ধানের জাতটি বছরের সব সময়ই আবাদ করা যায় শীত, গ্রীষ্ম বা অতি তাপমাত্রার সময়েও এটি ভাল ফলন দেয় যে নতুন জাতের ধানের মাধ্যমে আফ্রিকার এই পরিবর্তন তা বাংলাদেশে এনে কৃষি অর্থনীতি বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ‘নিরিকা’র একটি জাত এনে বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক আবাদ শুরম্ন করে অধিক খরা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে ধানের এ জাতটিতে বিএডিসি সূত্র জানায়, এ ধানের ফলন পাওয়া যাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে

গত এক বছর ৯ মাসে ৩টি পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষ করে সুফল পাওয়া গেছে বিএডিসির পরিচালক (বীজ) নূরম্নজ্জামান জানান, বিএডিসি আফ্রিকার এ ‘নিরিকা’ জাতের ধান আমন মৌসুমে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম পরীক্ষামূলক আবাদ করে এ সময় মাত্র ৬০ গ্রাম বীজ আবাদ করা হয় বীজ বপন থেকে শুরম্ন করে শস্য কর্তন পর্যত্ম সময় লাগে তিন মাস হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন দ্বিতীয় বার আবাদ করা হয় ডিসেম্বর মাসে এতে সময় লাগে ১১২-১১৫ দিন হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৪ দশমিক ৬০ টন

তৃতীয় পর্যায়ে আউশ মৌসুমেও আবাদ করা হয় এই মৌসুমে এ জাতের ধান ফলনে সময় লেগেছিল ৮৮ দিন পরীক্ষামূলকভাবে এটি মধুপুর ও জীবননগরে আবাদ করা হয় এর মধ্যে মধুপুরে ফলন পাওয়া পাওয়া গেছে ৮৮ দিনে এবং জীবননগরে পাওয়া গেছে ৮০ দিনে বিএডিসি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ‘নিরিকা’ জাতের ধানবীজ নিয়ে আসেন এবং বিএডিসি’কে পরীক্ষামূলক আবাদের জন্য প্রদান করেন

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এটি এমন এক ধরনের ধান যা তিন মৌসুমেই আবাদ করা যাবে আফ্রিকার মতো এ ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি বদলে যাবে যেসব জমি বর্তমানে অনাবাদি থাকছে, সেচ সুবিধা নেই, এমন জমিতেও জন্মাবে এই ধান দিনের তাপমাত্রা যতই তীব্র হোক, তা এ ধানের উৎপাদনে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না এ জাতের ধান বীজে কোন সুপ্ততা নেই, তাই এক ফসল তুলে ওই বীজ দিয়েই পরবর্তী মৌসুমে চাষ করা যাবে

বিএডিসি সূত্র জানায়, এ ধানের সুফল পাবার পর কৃষিমন্ত্রীর উদ্যোগে উগান্ডা থেকে চারটি জাত আনা হয়েছে এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে জমি কমছে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন নতুন ধানের জাত দেশের ধানের চাহিদা মেটাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

কিভাবে চিনবো ভেজাল সার?

ইউরিয়া

  • এই সারে ব্যাপক হারে ভর্তুকী প্রদানের ফলে দাম তুলনামূলকভাবে অন্যান্য সারের চেয়ে কম। তাই এই সারে ভেজালের মাত্রা তুলনামূলক বিচারে খুবই কম।
  • বর্তমানে ছোট সাদা দানা, বড় আকৃতির ধবধবে সাদা দানাদার এবং প্রিল এই তিন আকৃতির সার বাজারজাত হচ্ছে।
  • ইউরিয়া সার কোন অবস্থাতেই স্ফটিক আকার হবে না।

টিএসপি

  • অম্ল স্বাদ যুক্ত ঝাঁঝলো গন্ধ থাকবে।
  • এক চামচ টিএসপি সার আধা গ্লাস পানিতে মিশালে টিএসপি সার দ্রবীভূত হয়ে পরিষ্কার দ্রবণ তৈরী করবে।
  • ভেজাল টিএসপি সার পানিতে ঘোলা দ্রবন তৈরী করবে।
  • টিএসপি সার অধিক শক্ত বিধায় দুটো বুড়ো আঙ্গুলের নখের মাঝে রেখে চাপ দিলে সহজে ভেংগে যাবেনা।
  • ভেজাল টিএসপি সার দুটো বুড়ো আঙ্গুলের নখের চাপে ভেংগে যাবে এবং ভাংগা গুড়ার রঙ নানা রকমের হতে পারে।

এসএসপি

  • এক চামচ এসএসপি সার আধা গ্লাস পানিতে মিশালে এসএসপি সার সম্পুর্ণ দ্রবীভূত হবে তবে দ্রবণটি হবে ঘোলাটে।
  • অধিকাংশ সময়েই এ সার গুড়া আকারে পাওয়া যায়। দানাদার এসএসপি সার অধিক শক্ত বিধায় দুটো বুড়ো আঙ্গুলের নখের মাঝে রেখে চাপ দিলে সহজে ভেংগে যাবে।
  • সারের সাথে ৫-১০% হাইড্রোক্লোরিক এসিডের দ্রবণ দিলে কোন প্রকার বুদবুদ লক্ষ্য করা যাবে না। কেবল মাত্র ডলোমাইট মিশ্রিত থাকলেই কার্বন ডাই অঙাইডের বুদ বুদ উrপন্ন হবে।

ডিএপি

  • মান সম্পন্ন ডিএপি সার কিছুক্ষণ বাতাসে রাখলে ভিজে ওঠে কারণ এতে নাইট্রোজেনের মিশ্রন রয়েছে যা বায়ুমন্ডল থেকে আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে।

এফএমপি (ফিউজডম্যাগনেসিয়ামফসফেট)

  • এ সারেও টিএসপি সারের ন্যায় ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে এবং রং অনেকটা টিএসপি সারের মত হওয়ায় অনেক সময় টিএসপি সার হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।
  • কোন কোন এফএমপি সারের কয়েকটি দানা এক গ্লাস পানিতে কয়েকদিন রেখে দিলেও সামান্য পরিমাণেও দ্রবীভূত হবে না।

এমওপি

  • এক চামচ এমওপি সার আধা গ্লাস পানিতে মিশালে এমওপি সার সম্পুর্ণ দ্রবীভূত হয়ে পরিষ্কার দ্রবণ তৈরী করবে এবং রং হাতে লাগবে না।
  • ভেজাল এমওপি সারের নমুনায় কিছু অদ্রবনীয় বস্তু যেমন বালি,কাঁচের গুড়া, সাদা পাথরের গুড়া ইত্যাদি মেশালে জলীয় দ্রবনে তা তলানী আকারে গ্লাসের নীচে জমা থাকবে।
  • অধিকাংশ সময়ে এধরণের সারে মিহি বালি মেশানো হয়।
  • ভেজাল সারের নমুনায় লাল বা অন্য কোন রং মিশালে পানির রং সেই অনুযায়ী হবে এবং জলীয় দ্রবনে হাত দিলে হাতে রং লেগে যাবে। এ ছাড়া সারের নমুনা হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই হাতে রং লেগে যেতে পারে।

জিংকসালফেট (হেপ্টাহাইড্রেট)

  • জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট দেখতে স্ফটিকাকার।
  • ঠান্ডা পানিতে জিংক সালফেট ( হেপ্টা হাইড্রেট) সম্পুর্ণ গলে যায়, পাত্রে কোনরূপ তলানী থাকে না।

জিংকসালফেট (মনোহাইড্রেট)

  • জিংক সালফেট (মনো হাইড্রেট) দেখতে দানাদার।
  • ঠান্ডা পানিতে জিংক সালফেট ( মনো হাইড্রেট) সম্পুর্ণ গলে না এবং দ্রবণ ঘোলাটে হবে।
  • ম্যাগনেশিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরী ভেজাল জিংক সালফেট সার দেখতে ধবধবে সাদা।
  • ম্যাগনেশিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরী ভেজাল জিংক সালফেট সারে সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে পানিতে দ্রবিভূত করলে ঘোলাটে দ্রবণ তৈরী হবে এবং প্রচন্ড পরিমাণে বুদবুদ উঠবে। অন্যদিকে সারটি আসল জিংক সালফেট হলে পরিস্কার বা সচ্ছ দ্রবণ তৈরী হবে এবং কোন বুদবুদ উঠবে না। এ ছাড়া সোডিয়াম কার্বনেট তলানী হিসেবে তলানী দ্রবণে জমা হবে।
  • ম্যাগনেশিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরী ভেজাল জিংক সালফেট সারে সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে পানিতে দ্রবিভূত করলে ঘোলাটে দ্রবণ তৈরী হবে এবং প্রচন্ড পরিমাণে বুদবুদ উঠবে।
  • সারটি আসল জিংক সালফেট হলে পরিস্কার বা সচ্ছ দ্রবণ তৈরী হবে এবং কোন বুদবুদ উঠবে না।
  • এ ছাড়া সোডিয়াম কার্বনেট তলানী হিসেবে তলানী দ্রবণে জমা হবে।

চিলেটেডজিংক

  • এ সার দেখতে সাদা অথবা হলদেটে পাউডারের ন্যায় এবং খুবই হালকা।
  • এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে অর্থ চামচ চিলেটেড জিংক মিশালে তাrক্ষণিকভাবে পানিতে দ্রবিভূত হবে।
  • এ সারে সালফার থাকে না বিধায় জলীয় দ্রবনে বেরিয়াম ক্লোরাইড যোগ করলে কোন ঘোলা অধ:ক্ষেপ পড়বে না।
  • ভেজাল চিলেটেড জিংক তাrক্ষণিকভাবে পানিতে দ্রবিভূত হবে না এবং জলীয় দ্রবণে বেরিয়াম ক্লোরাইড যোগ করলে ঘোলা অধ:ক্ষেপ পড়বে।

বোরণসার (বরিকএসিডওবোরাক্স)

  • ঠান্ডা পানিতে বরিক এসিড সম্পূর্ণ গলেনা।
  • বরিক এসিডের দ্রবণে যদি বেরিয়াম ক্লোরাইড মিশানো হয় তবে সারটি বরিক এসিড হলে দ্রবনে কোন অধ:ক্ষেপ পড়বেনা। যদি নমুনাটি সোডিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরী ভেজাল বরিক এসিড হয় তবে দ্রবণে অধ:ক্ষেপ পড়বে।

বোরণসার (সলুবর)

  • সলুবর বোরণ দেখতে ধবধবে সাদা হালকা মিহি পাউডারের মত। ঠান্ডা পানিতে সম্পুর্ণ গলে যায় এবং পাত্রে কোনরূপ তলানী পড়ে না।
  • এক কেজি সলুবর বোরণ সারের প্যাকেট এক কেজি বরিক এসিড বা বোরাঙ সারের তুলনায় আকারে বড় হবে কারণ সলুবর ওজনে হালকা, তাই এক কেজি বরিক এসিডের প্যাকেটে আধা কেজি সলুবর সার রাখা যাবে।
  • সলুবর বোরণের দ্রবণে যদি বেরিয়াম ক্লোরাইড মিশানো হয় তবে সারটি সলুবর হলে দ্রবনে কোন অধ:ক্ষেপ পড়বেনা। যদি নমুনাটি সোডিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরী ভেজাল সলুবর হয় তবে দ্রবণে অধঃক্ষেপ পড়বে।

সবজির প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও রোগসমূহ দমন ব্যবস্থা

সবজির প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও রোগসমূহ দমন ব্যবস্থা

পোকা মাকড়/ রোগের নাম

আক্রান্ত শাক-সবজি

দমন পদ্ধতি

ফলের মাছি পোকা

সব ধরনের কুমড়া জাতীয় সবজি, টমেটো, ঢেঁড়স, সীম, শসা

আক্রান্ত ডগাগুলি তুলে ফেলুন এবং মাটিতে পুঁতে ফেলুন। বিষ টোপ (১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়া এবং ৮/৯ ফোটা নগস)দিয়ে পোকা-মাকড় মেরে ফেলুন।

জাব পোকা

বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, শালগম, মূলা, বরবটি, টমেটো

জাব পোকা হাতের সাহায্যে মারাই উকৃষ্ট পদ্ধতি। যদি এভাবে দমন না হয় তখন সুপারিশকৃত কীটনাশক সাবধানে ব্যাবহার করতে হবে যাতে মৌমাছি এবং পরাগায়নে সহায়তাকারী পতংগের কোনরূপ ক্ষতি না হয়। সাবান পানি দিয়েও দমন করা যায়।

বিটল

কুমড়া জাতীয় সবজি, শসা

বিটল হাতে তুলে মারা যায় এবং কেরোসিন ও কাঠের ছাই ছিটিয়েও দমন করা যায়। বেশী আক্রান্ত হলে সুমিথিয়ন, ফলিথিয়ন জাতীয় তরল স্প্রে করতে হবে এবং ফুরাডান, বাসুডিন বা ঐ জাতীয় দানাদার কীটনাশক মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

কাটুই পোকা

বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁপে, বেগুন, আলু, টমেটো

আক্রান্ত গাছ (শাখা ও ডগার কাটা অংশ) খুঁজে তার নিকট মাটি থেকে কাটুই পোকা বের করে বিনষ্ট করতে হবে। ছোট গাছগুলির চারিদিকে ছাই-কেরোসিন মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। তবে চিটাগুড়, হেপ্টাক্লোর এবং ধানের তুষ মিশিয়ে সন্ধ্যায় জমিতে দিয়ে দমন করা যায়।

ডগা এবং ফলের মাজরা পোক/ কান্ডের মাজরা পোকা

ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো, সীম

আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করুন। পাতা ও ডগা থেকে সংগৃহীত পোকার ডিমগুলি ধ্বংস করুন।গাছে ছাই ব্যবহার করুন।

সাদা মরিচা

লাল শাক ও ডাঁটা শাক

আক্রান্ত অংশ ধ্বংস করে ফেলুন।

মোজাইক ভাইরাস

ঢেঁড়স, টমেটো, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, আলু, শসা, বাঁধাকপি

আক্রান্ত গাছগুলি উপড়ে ফেলুন এবং জাবপোকা, পাতাফড়িং ও অন্যান্য বাহক পোকা যাতে রোগ ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলুন।

পাতা মোড়ানো ভাইরাস

ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, বেগুন

তাক্ষনিকভাবে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন এবং আগাছা পরিস্কার করুন। এই রোগ বহনকারী পোকা-মাকড় দমন করুন।

পাতায় দাগরোগ

বাঁধাকপি, পুঁইশাক, পালংশাক, মূলা, সীম, টমেটো, লাউ, বেগুন করল্লা

আক্রান্ত গাছ আংশিক বা সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলুন। বোর্দ্দ মিক্সার প্রয়োগ করুন। আগাছা পরিস্কার করে ও শস্য পর্যায় অবলম্বন করে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঢলে পড়া রোগ

বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন

রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করুন এবং পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। ডায়াথেন এম-৪৫ প্রয়োগ করুন।

ফিউজারিয়াম উইল্ট

বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন সীম, শসা

রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ ব্যবহার, শস্য চক্র অবম্বন করুন, আক্রন্ত গাছ উপড়ে ফেলুন এবং বোর্দ্দ মিক্সার ব্যবহার করুন।

পাউডারী মিলডিউ

টমেটো, বেগুন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, করল্লা

আক্রান্ত গাছের অংশ বা সম্পূর্ণ গাছ পুড়িয়ে ফেলুন এবং বোর্দ্দ মিক্সার স্প্রে করুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরোক্ত অজৈব পদ্ধতিগুলি প্রয়োগের সুপারিশ শুধুমাত্র তখনই করা হয় যখন সর্ব প্রকারের জৈব পদ্ধতি অকার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়।

মরিচ

রোগের নামঃ কৃমিজনিত রোগ বা রূটনট নেমাটোড

রোগের কারণঃ মেলডোগাইন প্রজাতির কৃমি

লক্ষণঃ
শিকড়ে ছোট ছোট গিট দেখা যায় গিটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয় রোগাক্রান্ত গাছটি খাটো ও খর্বাকার হয় রোগাক্রান্ত শিকড়ে সহজেই পচন ধরেমাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে পরিশেষে গাছ মরেও যেতে পারে

রোগের বিস্তারঃ কৃমি মাটিবাহিত রোগ ও রোগাক্রান্ত শিকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
পুঁই

রোগের নামঃ কৃমিজনিত রোগ বা রূটনট নেমাটোড

রোগের কারণঃ মেলডোগাইন প্রজাতির কৃমি

লক্ষণঃ
শিকড়ে ছোট ছোট গিট দেখা যায় গিটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয় রোগাক্রান্ত গাছটি খাটো ও খর্বাকার হয় রোগাক্রান্ত শিকড়ে সহজেই পচন ধরেমাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে পরিশেষে গাছ মরেও যেতে পারে

রোগের বিস্তারঃ কৃমি মাটিবাহিত রোগ ও রোগাক্রান্ত শিকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
ঢেড়শ

রোগের নামঃ কৃমিজনিত রোগ বা রূটনট নেমাটোড

রোগের কারণঃ মেলডোগাইন প্রজাতির কৃমি

লক্ষণঃ
শিকড়ে ছোট ছোট গিট দেখা যায় গিটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয় রোগাক্রান্ত গাছটি খাটো ও খর্বাকার হয় রোগাক্রান্ত শিকড়ে সহজেই পচন ধরেমাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে পরিশেষে গাছ মরেও যেতে পারে

রোগের বিস্তারঃ কৃমি মাটিবাহিত রোগ ও রোগাক্রান্ত শিকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
বরবটি

রোগের নামঃ কৃমিজনিত রোগ বা রূটনট নেমাটোড

রোগের কারণঃ মেলডোগাইন প্রজাতির কৃমি

লক্ষণঃ
শিকড়ে ছোট ছোট গিট দেখা যায় গিটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয় রোগাক্রান্ত গাছটি খাটো ও খর্বাকার হয় রোগাক্রান্ত শিকড়ে সহজেই পচন ধরেমাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে পরিশেষে গাছ মরেও যেতে পারে

রোগের বিস্তারঃ কৃমি মাটিবাহিত রোগ ও রোগাক্রান্ত শিকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
লাউ/কুমড়া/শসা

রোগের নামঃ পাউভারি মিলভিউ

কারণঃ ওইউিয়াম প্রজাতির ছত্রাক

লক্ষণঃ

এ ছত্রাকের আক্রমন প্রথমে বয়স্ক পাতায় দেখা যায় পাতার উপরের দিকে সাদা পাউডারের মত প্রলেপ পরে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকের পাতাও আক্রানত গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে আক্রমনের প্রথম স্তরে দাগগুলো সাদা ও ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ পাতাই শুকিয়ে ঝরে পড়ে


...বিস্তারিত পড়ুন...
বাঁধা কপি/ফুল কপি/মুলা

রোগের নামঃ ড্যাস্পিং অফ

কারণঃ পিথিয়াম এ্যফিনেডারমেটাম, স্কেলেরোসিয়াম, রাইজকটোনিয়া, ফিউপেরিয়াম প্রভৃতি প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে

লক্ষণ:

আক্রান্ত অংকুরিত চারার রং ফ্যাকাসে সবুজ হয় ও কান্ডের নীচের দিকে মাটি বরাবর বাদামী রঙের পানি ভেজা দাগ পড়ে বীজতলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক দেখা যায় অনুকুল পরিবেশে এক সপ্তাহের মধ্যে বীজতলার সমস্ত চারা মারা যেতে পারে এ রোগের জীবানু প্রধানতঃ মাটিতে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পেলে এগুলো দ্রুত যৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করে থাকে এ রোগের আক্রমন বীজ অস্কুরোদগমনের আগেও হতে পারে অর্থাৎ বীজ বপনের পর মাটিতে থাকা ছত্রাকের আক্রমনে বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে
আক্রান্ত জায়গার চারার গোড়া পচে যায় ও চারা মারা যায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
বেগুন

রোগের নামঃ ফল ও কান্ড পচা

কারণ: ফোমপসিস ভেকসান নামক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত এটি বীজবাহিত রোগ

লক্ষণ:
মাটির সংযোগস্থেল গাছের কান্ড হঠাৎ সরূ হয়ে যায় পাতা ঝরে পড়ে, কান্ডের বাকল শুকিয়ে যায় আক্রান্ত স্থলে কাল ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও ক্ষত স্থানে কালো ছত্রাক দেখা যায় আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায়

...বিস্তারিত পড়ুন...
টমেটো

১. রোগের নামঃ আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট
অলটারনেরিয়া সোলানি নামক ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে এটি বীজবাহিত

লক্ষণঃ
এ রোগ যে কোন সময় হতে পারে রোগের জীবাণু গাছের পাতা, কান্ড ও ফল আক্রমন করে থাকে সাধারণত বয়স্ক পাতায় এ রোগের লক্ষণ প্রথম দেখা যায় পরবর্তীতে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত পাতার উপর কালো কিংবা বাদামী রংয়ের বৃত্তাকার দাগ পড়ে ক্ষতস্থানটিতে অনেকগুলো চক্রাকার দাগ থকে যাহা এ রোগের একটি বিশেষত্ব রোগের ব্যাপকতার সাকে অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত পাতা ঝরে পড়ে পুস্প মঞ্জুরীর বোঁটা আক্রান্ত হলে ফুল ও অপ্রাপ্ত ফল ঝরে পড়ে ফলের গায়ে ও বৃত্তাকার দাগের সৃষ্টি হয়


...বিস্তারিত পড়ুন...
কচু

কচু বাংলাদেশের একটি প্রধান সবজি এতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে কচু সাধারণত খরিপ মৌসুমে চাষ করা হয় এটি খরিপ মৌসুমের শতকরা প্রায় ২৬ ভাগ দখল করে থাকে বর্ষার শেষ ভাগে বাজারে সবজির প্রকট ঘাটতি দেখা যায় এ সময় কচুই সবজির ঘাটতি অনেকটা পুরণ করে থাকে বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী অন্যান্য ফসলের ন্যায় কচুও নানা রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, যার ফলে এর ফলন হ্রাস পায় নিম্নে কচুর বিভিন্ন রোগ ও তার দমন ব্যবস্তা নিয়ে আলোচনা করা হল এছাড়া এর স্টার্চ কণা ছোট বলে শিশু খাদ্য হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায়

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি ও প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি ও প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ আসে কৃষি থেকে। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির এ অবদান অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর চেয়ে বেশি (পাকিস্তানের জিডিপির ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ১০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ২২ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশসমূহের জিডিপির ৩০ শতাংশ) আসে কৃষি থেকে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমহ্রাসমান হলেও এখনও অনেকের তুলনায় বেশী। এ দেশের শতকরা ৭০ জনেরও বেশি মানুষ গ্রামে বাস করে, যাদের প্রধান পেশা কৃষি।

গ্যাট চুক্তির অষ্টম রাউন্ড অর্থাৎ উরুগুয়ে রাউন্ডে প্রথমবারের মতো কৃষির অন্তর্ভুক্তি ঘটে। তার মানে এই নয় যে বিশ্ব বাণিজ্যে কৃষিজ পণ্যের বেচাকেনা করে। উন্নত দেশসমূহ তাদের অভ্যন্তরীণ কৃষিনীতিকে আড়াল করার জন্যই কৃষিজাত সামগ্রী বাজারজাত করে তারা বিস্তর মুনাফা কামিয়েছে। শিল্প খাতের আয়কৃত অর্থে আধুনিকীকরণ করেছে পুরো কৃষি ব্যবস্থা। প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে কৃষিকে বৃহৎ খামারে পরিণত করেছে, ফলে উৎপাদনও বেড়েছে ঢের। কিন্তু কেউ কখনো তলিয়ে দেখেনি যে, কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে তফাতটা কতটুকু।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর জেনারেল ড. রোনাল্ড পি ক্যানট্রিল তার এক গবেষণায় উন্নত ও অনুন্নত কতিপয় দেশের ধান উৎপাদনের তুলনামূলক খরচ ও অভ্যন্তরীণ বাজার দেখিয়েছেন এভাবেই- (১৯৯৪ সালের তথ্য)

দেশ

ধান উৎপাদন
টন প্রতি হেক্টর

উৎপাদন খরচ
ইউএস ডলার প্রতি টন

অভ্যন্তরীণ মূল্য
ইউএস ডলার প্রতি টন

জাপান

৬.৫

১৯৮৭

১৭৩০

যুক্তরাষ্ট্র

৬.৩

২২০

১৬৭

কোরিয়া

৬.৬

৯৩৯

৯৫৭

থাইল্যান্ড

১.৮

১২০

১৪১

ভিয়েতনাম

৪.৫

১০০

১৩০

ফিলিপাইন

২.৬

১২৪

১৬০

ইন্দোনেশিয়া

৫.৮

১১৭

১৩২

বাংলাদেশ

৪.৬

১৩৮

১৮০

উপরিউক্ত তথ্যে দেখা যায় যে, শিল্পোন্নত ও অনুন্নত দেশের ধান উৎপাদন খরচের ব্যবধান খুবই বেশি। যদিও অভ্যন্তরীণ বাজারে ধানের মূল্য তুলনামূলক হারে বেশি কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য অবশ্যই অনুন্নত দেশের মূল্যমানের কম। এতে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, শিল্পোন্নত দেশের কৃষি ব্যবস্থা সার্বিকভাবেই ভর্তুকিনির্ভর। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে নিজেদের কৃষি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার চেয়ে উন্নত বিশ্বের বড় যে তাড়না ছিল তা হলো অনুন্নত বিশ্বের কৃষিকে কোনো না কোনোভাবে ঠেকানো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটবে। বিষয়টি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতোই।

আঙ্কটাডের এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় জোট আর জাপান মিলে বছরে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি কৃষিতে প্রদান করে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট ওইসিডি ১৯৮৮ সালে একটি হিসাবে দেখায় যে, ১৯৮৪-৮৬ সালের মধ্যে কৃষিতে সবকিছু মিলিয়ে টাকা ফেরত গেছে ১৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৭৯-৮০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ ছিল ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই দুই সময়পর্বে কৃষিক্ষেত্রে সাকুল্যে খরচ বেড়েছে, ইউরোপীয় জোটের দেশগুলোতে শতকরা ৪০ ভাগ, জাপানে দ্বিগুণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি। রাষ্ট্রীয় কোষাগার এই খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছে না বিধায় কৃষিতে গ্যাটের অষ্টম রাউন্ডে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনায় সম্পৃক্ত করে।

কৃষিকে পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দিতে কেউই রাজি ছিল না, তারপরও বাধ্য হয়েই কৃষি বাণিজ্য কতিপয় বিধিমালা আরোপিত হয়, যেমন-

এক. কৃষি বিষয়ক চুক্তি।
দুই. স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি বিষয়ক চুক্তি।
তিন. বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজাত সম্পত্তির ওপর অধিকার। সংক্ষেপে ট্রিপস
আমাদের কৃষিতে উপরিউক্ত চুক্তিসমূহ কী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে তা একটু খতিয়ে দেখা যাক-

কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকির কথা বিবেচনায় আনলে দেখা যায় যে, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কৃষিপণ্যের ওপর ভর্তুকি ঠিকই থেকে গেল। শিল্পোন্নত দেশগুলো যদি তাদের কৃষিতে শত ভাগ ভর্তুকি প্রদান করে এবং চুক্তি মোতাবেক যদি শতকরা ২০ ভাগ ভর্তুকি কমায়, তবে এখনো ৮০ ভাগ ভর্তুকি থেকেই গেল। শিল্পোন্নত দেশগুলো যে তাদের কৃষিতে শত ভাগ ভর্তুকি প্রদান করে তা প্রমাণিক সত্য। কারণ, তাদের উৎপাদন খরচ অভ্যন্তরীণ বাজার দরের চেয়ে বেশি। সুতরাং শত ভাগ রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি ছাড়া কেউ কৃষি কাজ করবে না।

অন্যপক্ষে অনুন্নত দেশ কৃষিতে ভর্তুকির হার এমনিতেও কম, তারপরও কমিয়ে যদি ১০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা হয় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সমর্থন বা ব্যয় প্রত্যাহার করা হয় তবে কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে কৃষিপণ্য রপ্তানি ভর্তুকির সুযোগ থাকলেও দুর্বল অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশে তা পারবে না। ফলে আমাদের দেশের কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এর আবার অন্য হিসাবও আছে। যেমন- বর্তমানে (১৯৯৪ সালে) বাংলাদেশে প্রতি টন ধানের উৎপাদন খরচ ১৩৮ ডলার এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রয় মূল্য প্রতি টন ১৮০ ডলার। কৃষি খাতে যদি রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হয় তবে উৎপাদন খরচ বাড়বে নিশ্চিত। এখনো এ ধরনের প্রভাব কৃষিতে লক্ষণীয়। ফলে প্রান্তিক চাষি, বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগ লোক কৃষিতে উৎসাহ হারাবে। শুরু হবে কৃষি শিল্পায়ন, একক প্রজাতির শস্যের আবাদ, অধিক ফলনের আশায় বিপুল সার কীটনাশক প্রয়োগ, এমনকি সর্বনাশা হাইব্রিড শস্যের আবাদে বিনষ্ট হবে বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য পারিবারিক কৃষি ব্যবস্থা।

যদিও বলা হচ্ছে, কৃষিতে ভর্তুকি চলবে না, কমাতে হবে, তবুও উন্নত দেশগুলো কিন্তু তাদের কৃষিতে ভর্তুকি প্রদানের পথ সৃষ্টি করেই রেখেছে। এগুলো হলো গ্রিন বক্স এবং ব্লু বক্স পলিসি। গ্রিন বক্স পলিসিতে বলা হলো, যে ব খাত কৃষি পণ্যের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না যেমন, কৃষি গবেষণা, সমপ্রসারণ কর্মকাণ্ড, বালাই প্রতিরোধ ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক খরচ ইত্যাদিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থায়ন করা যাবে। এখানে চাতুরিটা এই যে, উন্নত দেশগুলো গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি, বীজ, সার, বালাইনাশক উৎপাদন করবে আর আমরা তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ তাদের কাছ থেকে নতুন প্রযুক্তি কিনব, টন টন বীজ, সার বালাইনাশক কিনব। কৃষি পণ্য উৎপাদন করব এবং তা কাঁচামাল হিসেবে উন্নত দেশসমূহ স্বল্পমূল্যে কিনে নেবে।

কৌশলের দুটো দিক
এক. উন্নত দেশসমূহ এত দিন কৃষিতে শিল্পায়ন ঘটিয়ে, ব্যাপক রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিয়ে টনে টনে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, জমিতে ঢেলেছে। গাছপালা, প্রাণবৈচিত্র্য, পোকামাকড়, অণুজীব ধ্বংস করেছে। পরিবেশকে করেছে মারাত্মক সমস্যাগ্রস্ত। খাদ্যের মধ্যেই বিষ এসে মুখের গ্রাসে ঢুকছে। এখন পরিবেশ সংরক্ষণ ও নিজে বাঁচার তাগিদ ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে উদ্ভাবিত সব প্রযুক্ত ঠেলে পাঠাচ্ছে আমাদের দিকে। যাতে আমাদের যা আছে তাও হারিয়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল হই উন্নত বিশ্বের ওপর এবং তারা কৃষি উপকরণের ব্যবসায় মুনাফা লুটুক দুমুঠো ভরে।

দুই. যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ প্রযুক্তিগতভাবে দুর্বল এবং এখনো কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপক প্রযুক্তি ও সফলতা নেই, সেহেতু কৃষি কাঁচামালই আমাদের বিক্রি করতে হবে।

ট্রিপস এর অর্থ হলো বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজাত সম্পত্তির অধিকার। এই চুক্তিতে নতুন যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে তা হলো বুদ্ধিজাত সম্পত্তি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে যদি কোনো নতুন সামগ্রী বা ডিজাইন বা কলাকৌশল আবিষ্কার ও সৃষ্টি করে তবে সেগুলো বুদ্ধিজাত সম্পত্তি হিসেবে ধরা হয়। শুধু তাই নয়, জমি ও প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানসমূহও মালিকানা, দখলদারিত্ব, অধিকার প্রভৃতি আইন করে বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ট্রিপস চুক্তির মাধ্যমে।

একটা সময় ছিল, যখন বিশ্বাস করা হতো বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ মানুষের সাধারণ সম্পত্তি, তাতে ছিল আমজনতার অধিকার। বিজ্ঞানীরাও সভ্যতার বিকাশের জন্য, মানুষের উপকারের জন্য নির্লোভ ও নিরলসভাবে হয়ে কাজ করে গেছেন আজীবন। ইতিহাস সেইসব মহৎপ্রাণকে আজও স্মরণ করে পরম শ্রদ্ধায়।
দুই. যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ প্রযুক্তিগতভাবে দুর্বল এবং এখনো কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপক প্রযুক্তি ও সফলতা নেই, সেহেতু কৃষি কাঁচামালই আমাদের বিক্রি করতে হবে।

ট্রিপস এর অর্থ হলো বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজাত সম্পত্তির অধিকার। এই চুক্তিতে নতুন যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে তা হলো বুদ্ধিজাত সম্পত্তি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে যদি কোনো নতুন সামগ্রী বা ডিজাইন বা কলাকৌশল আবিষ্কার ও সৃষ্টি করে তবে সেগুলো বুদ্ধিজাত সম্পত্তি হিসেবে ধরা হয়। শুধু তাই নয়, জমি ও প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানসমূহও মালিকানা, দখলদারিত্ব, অধিকার প্রভৃতি আইন করে বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ট্রিপস চুক্তির মাধ্যমে।

একটা সময় ছিল, যখন বিশ্বাস করা হতো বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ মানুষের সাধারণ সম্পত্তি, তাতে ছিল আমজনতার অধিকার। বিজ্ঞানীরাও সভ্যতার বিকাশের জন্য, মানুষের উপকারের জন্য নির্লোভ ও নিরলসভাবে হয়ে কাজ করে গেছেন আজীবন। ইতিহাস সেইসব মহৎপ্রাণকে আজও স্মরণ করে পরম শ্রদ্ধায়।
সময় বলেছে, বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ মুনাফামুখী হয়ে পড়ছে দিনকে দিন। বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এখনে কর্পোরেট সম্পত্তি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন বৈজ্ঞানিক নিয়োগ দেয়। আবিষ্কার করে নতুন নতুন সামগ্রী বা ডিজাইন বা কলাকৌশল। যেগুলো ওই কোম্পানির পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিত লাভ করে।

বুদ্ধিজাত সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
* ১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ভেনিস নগর রাষ্ট্র সর্ব প্রথম প্যাটেন্ট আইন চালু করে। তখন প্যাটেন্ট অধিকার সংরক্ষিত ছিল এই বলে যে, দাবিকৃত আবিষ্কারে বা উদ্ধাবনের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখাতে হবে।
* ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের সময় প্যাটেন্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কোনো আবিষ্কার বা উদ্ভাবন হতে আইনের মাধ্যমে সমাজের সবাইকে বঞ্চিত করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
* ১৭৯১ সালে ফ্রান্সের প্যাটেন্ট আইনে বলা হয় যে, আবিষ্কার তার আবিষ্কারের ওপর একচেটিয়া অধিকার লাভ তার প্রাকৃতিক অধিকার।
* ১৭৯৪ সালের প্যাটেন্ট আইন অস্ট্রিয়া মেনে নেয়নি। তাদের মতে, প্যাটেন্ট প্রাকৃতিক অধিকার তো নয়ই, বরং একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার।
* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ঔপনিবেশবাদ হতে স্বাধীন হতে থাকলে, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নের প্রশ্নে প্যাটেন্ট ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
* ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘ The Role of Patents in the Transfer of technology to developing countries শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করে, যেখানে যেখানে প্যাটেন্ট বিষয়ক নতুন দিকনির্দেশনা আসে।
* ১৯৭২ সারে চিলির সান্টিয়াগো শহরে আঙ্কটাডের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতিরসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আঙ্কটাডের সেক্রেটারি জেনারেল ও WIPO (World International Property Organisation)-এর ডিরেক্টর জেনারেল ঐকমত্যের ভিত্তিতে The Role of Patents in teh Transfer of technology to developing countries বইটিকে সমসাময়িক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে লিখতে উদ্যোগী হন।
* ১৯৭৫ সালে The Role of Patents in teh Transfer of technology to developing countries নতুনভাবে প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয় প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক বা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সম্পত্তিমূলক অধিকার স্বাভাবিক বা প্রকৃতিপ্রদত্ত কোনো অধিকার নয়।
* ১৯৮৩ সারে ইউরোপ ও ল্যাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ প্যাটেন্ট ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক ছক হিসেবে পরিচিত প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
* ১৯৮৭ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

প্যাটেন্ট ও প্যাটেন্ট আইনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেখা যায় যে, এ সব কার্যকলাপে শুধু উন্নত দেশসমূহই সম্পৃক্ত ছিল এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা, সমঝোতা ও চুক্তি করার ভিন্ন ফোরাম ছিল। এ ক্ষেত্রে World International Property Organisation (WIPO) ছাড়াও জাতিসংঘ ও আঙ্কটাড কথা বলেছে বিভিন্ন সময়। তবুও উন্নত দেশগুলো এ বিষয়টিকে বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এনেছে। এর প্রধান কারণ হলো, যদি কোনো দেশ শিল্পোন্নত দেশের কোনো কোম্পানির বুদ্ধিজাত সম্পত্তির অধিকার খর্ব করে তাহলে অনায়াসেই শাস্তি দেওয়া যাবে। কারণ, যেসব দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে, তাদের অবশ্যই এ সম্পর্কিত সব চুক্তি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় এক খাতের পরিবর্তে আরেক খাতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ তো রইলই।

বাংলাদেশসহ দ. এশিয়ার অন্যান্য দেশ (উন্নয়নশীল দেশ) উদ্ভিদ, গাছগাছড়া, প্রাণী, অণুজীবসহ অন্যান্য প্রাণ বৈচিত্র্যের বিপুল সম্ভার। কৃষি এসব দেশে তথাকথিত শিল্প হিসেবে বিকশিত না হলেও প্রথাগত ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও অধিকাংশ মানুষের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এখনো প্রাণসম্পদের ওপর নিজস্ব মালিকানা বা অধিকার বলতে কখনো কিছু ছিল না। তাই কৃষিতে বুদ্ধিজাত সম্পত্তির অধিকার বলবত নেই। প্রথম গ্যাট চুক্তির মাধ্যমে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রাণ সম্পদের ওপর বুদ্ধিবৃত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলো।

ট্রিপসের ২৭নং চুক্তিনামায় বলা আছে, যেকোনো আবিষ্কারেই প্যাটেন্টের আওতাভুক্ত হবে। হোক তা উৎপন্ন সামগ্রী বা উৎপাদন প্রক্রিয়া। এটাকে ঘুরিয়ে অন্যভাবেও বলা হয়েছে পরে, যার অর্থ হলো কোনো না কোনো ধরনের বুদ্ধিজাত সম্পত্তির ধরন প্রবর্তন করতেই হবে। প্যাটেন্ট ব্যবস্থা চালু করতেই হবে সেটা না বলে বলা হচ্ছে যে, প্যাটেন্ট করো অথবা আপনা-আপনি বুদ্ধিজাত সম্পত্তির মালিকানা সৃষ্ট হয়ে যায় এমন কোনো স্বীকৃত কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাকে ডব্লিউটিওর ভাষায় Effective Sovigeners System বলা হচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় যে, বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে আপনা-আপনি নির্ণীত ও স্বীকৃত বুদ্ধিজাত সম্পত্তির মালিকানা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু আদতে তা নয়। এখানে কার্যকর কথাটাই গোলমেলে। অর্থাৎ কোনো দেশ যেকোনো ব্যবস্থা নিলেই চলবে না, সেটা শিল্পোন্নত দেশ, বহুজাতিক কোম্পানি সর্বোপরি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দৃষ্টিতে কার্যকর বলে বিবেচিত হতে হবে।
উন্নত বিশ্বে ইতিমধ্যেই কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে অন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলছে। এবং অনুন্নত দেশসমূহকে সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করাত চাপ প্রয়োগ বা বাধ্য করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, International Convention for the Protection of Non Verieties of psants (UPV) নামের এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেই বুদ্ধিজাত সম্পত্তির মালিকানা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।

বস্তুত দেখা যায় নিজস্ব কার্যকর ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। সব ক্ষেত্রেই মোদ্দাকথা হলো প্রাণের ওপর মালিকানা স্বত্ব কায়েম করা।
ট্রিপস চুক্তি অনুসারে কৃষি ক্ষেত্রের যে বিষয়গুলো বাণিজ্যিক কারণে ব্যক্তিগত ও কার্পোরেট সম্পত্তিতে কুক্ষিগত হলো। সেগুলো হলো-
এক. গাছপালার ওপর মালিকানা ব্যবস্থা চালু। নতুন প্রজাতির গাছপালা ও উদ্ভিদের ওপর এর আবিষ্কারক বা তৈরিকারকদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা।

UPOV কী?
১৯৬১ সালে ইউরোপের শিল্পোন্নত ছয়টি দেশ নতুন উদ্ভাবিত উদ্ভিদ জাতের সংরক্ষণ ও এর ওপর বাণিজ্যিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য International Convention for the Protection of New Verieties of psants (UPOV) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ চুক্তিতে বলা হয়, কেউ যদি (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) কোনো নতুন উদ্ভিদ, বীজ বা প্রাণী উদ্ভাবন বা সৃষ্টি করে তবে তার মালিকানা স্বত্ব ওই ব্যক্তি বা কোম্পানির হবে। কৃষক কেবল উদ্ভাবিত জাতের শস্যসমূহ আবাদ করতে পারবে কিন্তু শস্যের বীজের সংরক্ষণ বা একের সঙ্গে অন্যের বীজ বিনিময় করতে পারবে না। তাহলে বিষয়টি এই দাঁড়ালে যে Jui Genesis Act হিসেবে আমাদের যে এর UPOV দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সেখানেও কৃষি কৃষকের থাকছে না।
এখানে উদ্ভিদ বা বীজ বা প্রাণী সৃষ্টির কথাটিও বিভ্রান্তি আসতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হচ্ছেও তাই। যেমন, নতুন হাইব্রিড ধান তৈরি, নতুন প্রজাতির মাছ তৈরি, উন্নত ধরনের গাভি তৈরি ইত্যাদি।
যদিও নতুন কোনো একক প্রাণী সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তবুও দুটি ভিন্ন ধরনের প্রাণী বা উদ্ভিদের মিলন ঘটিয়ে হমেশাই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভিদ I প্রাণী। শুরুতে UPOV চুক্তিতে ছয়টি দেশ স্বাক্ষর করলেও ১৯৯০ সালে এর সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ২০টি এবং ২০০২ সালের মে মাসের মধ্যে ৫০টি দেশও G চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

দুই. অণুজীব যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদিতে প্যাটেন্ট বা মালিকানা স্বত্ব প্রণয়ন।
তিন. অণুজীবজনিত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও প্যাটেন্ট ব্যবস্থা চালু।

শেষ পর্যন্ত বিষয়টি এই হলো যে, কৃষকের নিজের বলে কিছু থাকল না, না বীজ, না কৃষি প্রযুক্তি। অথচ কৃষির সেই সৃষ্টি থেকে কৃষক তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন শস্যের আবাদ, বীজ সংরক্ষণ, নয়া কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ইত্যাদি করে আসছে।

তবে এ বিষয়টি দেখা দরকার যে, কৃষক কীভাবে এবং কোন চক্রান্তের ফলে আজ সবকিছু হারাতে বসেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে বিবেচনায় আনলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের বিপর্যয়ের ইতিহাস খুবই পুরোনো নয়। শিল্পে দেশগুলোর কৃষি সার্বিকভাবেই রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল। ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষি পণ্যের কমিয়ে রেখে এতদিন কোনোক্রমে অনুন্নত দেশের কৃষিতে ঠেকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এতে উল্টো ফলটাই ঘটল। রাসায়নিক ও কীটনাশকনির্ভর চাষাবাদের ফলে একদিকে নিজেদের পরিবেশ এবং প্রাণ বৈচিত্র্য যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি উচ্চতর ভর্তুকির ফলে খালি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার। কত দিন আর এভাবে পারা যায়। এর চেয়ে ভালো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কৃষিজকাজের সুবিধে দেওয়াই ভালো। অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করে তৃতীয় বিশ্বর দেশগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়াক, তাদের পরিবেশের বারোটা বাজাক। ব্যাপারটা ঘটলও তাই, কৃষির পরিবর্তে উন্নত দেশগুলো মনোযোগী হলো নতুন নতুন শস্যের বীজ, কীটনাশক, রাসায়নিক সার উৎপাদনে। বাংলাদেশও এ চক্রান্ত হতে রেহাই পায়নি। পঞ্চাশ-ষাটের দশকের দিকে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ধুয়া তোলা হয়। এর পেছনের কারণ ছিল যুদ্ধ-পরবর্তীকালে উন্নত বিশ্ব গড়ে ওঠা রাসায়নিক কারখানায় উৎপাদিত বীজ ও সারের বাজার প্রতিষ্ঠা ও সমপ্রসারণ করা। তৃতীয় বিশ্ব বীজ, পানির পাম্প, সার, কীটনাশক ইত্যাদির বাজার তৈরি করার জন্য তৃতীয় বিশ্বকে এদিকে ঋণ দিয়েছে, অন্যদিকে সবুজ বিপ্লবের গুণগান গেয়ে বহুজাতিকদের পণ্য বিক্রি করছে। এর ফলে যে ভয়াবহ প্রভাবটি আমাদের কৃষিতে পড়েছে তা হলো জমিতে এক জাতীয় শস্যের আবাদ। অর্থাৎ সবুজ বিপ্লবের ঝাণ্ডাধারীদের প্রচারণায় জমিতে শুধু অধিক উৎপাদনশীল ধানের আবাদ করেছি। নির্বিচারে সার, কীটনাশক দিয়েছি জমিতে। জমির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে, ঊর্বরতা কমেছে, অণুজীব মরেছে। আর আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস করেছি। আমাদের এক সময় প্রায় ১২ হাজার ধরনের ধান ছিল, সেটা কমতে কমতে সাত-আটটায় এসে ঠেকেছে। কৃষকরা ক্রমে কৃষিপণ্যের জন্য নির্ভরশীল হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর। যেগুলো এক সময় কৃষকেরই ঘরে সংরক্ষিত থাকত। পরিবারের বয়স্করা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতেন, পরস্পরের মধ্যে প্রয়োজন সাপেক্ষে বিনিময় করতেন।

গুটিকত শস্য বা উফশী জাতীয় ধানের চাষাবাদের ফলে খালি ধানের ওপর নজর আবদ্ধ রাখা হয়। কৃষির আধুনিকায়নের ফলে মাছ ও কুড়িয়ে পাওয়া অন্যান্য কাদের যে সর্বনাশটা হয়ে গেছে তার হিসাব আমরা করি না। আবার কৃষির উৎপাদন খরচ ও প্রাপ্তির হিসাবটাও মেলানো হয় না সেভাবে। প্রকৃত অর্থে নতুন জাত উদ্ভাবন করায় কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নতুন জাত আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস না করে।

টমেটোর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

টমেটোর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

সামগ্রীকভাবেই যে কোন ফসলের ভাল বীজ উৎপাদন করা তা উৎপাদনের তুলনায় অধিক দক্ষতা ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। আর বীজ উৎপাদনের বেলায় তা যদি সবজি বীজ উৎপাদন হয় তাহলে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগী, বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ও সর্বপরি দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। সবজি ফসল উৎপাদনে নিবিড় পরিচর্য্যার প্রয়োজন। আর ভাল গুনগত মানসম্পন্ন সবজি বীজ উৎপাদন করতে হলে সেই পরিচর্য্যার পাশাপাশি আরও কিছু অতিরিক্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক যা নিম্নে দেয়া হলো-
১। নির্দিষ্ট জাতের পরিচয়গত বৈশিষ্ট্যসমূহ জানা
২। ঐ জাতের প্রজনন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা
৩। নির্দিষ্ট জাতের প্রয়োজনীয় আবহাওয়া ও বপন/রোপন সময় সম্পের্কে জ্ঞান
৪। সবজিভেদে পরিচর্য্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান
৫। স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বা সময় সম্পর্কে জানা
৬। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিয়নিত্রত পরাগায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান
৭। অর্নিধারিত গাছ বাছাইকরণ পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে জানা
৮। নির্দিষ্ট জাতের বীজ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের কার্যকর দমন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান
৯। সঠিক সময়ে পরিপক্ক বীজ ফসল কর্তন/সংগ্রহ করার পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা একান্ত অপরিহার্য।

জলবায়ু ও মাটি
টমেটো এদেশে শীতকাশীন ফসল। উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা টমেটো গাছে রোগ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিকরে। আবার উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুল ঝরে পড়ে। রাত্রির তাপমাত্রা ২৩০ সেঃ এর নীচে থাকলে তা গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশী উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০০-২৫০ সেঃ টমেটোর ভাল ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দোঁআশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোঁআশ থেকে এটেল দোঁআশ সব মাটিতেই টমেটো ভাল জন্মে। বন্যার সময় পলি জমে এমন জমিতে এর ফলন সরচেয়ে ভাল হয়। মাটির অ্‌ম্লতা বেশী হলে জমিতে চুন প্রয়োগ করা উচিত।

জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা উদ্ভাবিত টমেটোর উন্মুক্ত (OP) জাত গুলির সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট নিম্নে দেয়া হলো-
বারি টমেটো-২ (রতন): ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৩: ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৪: ফলের ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম। ফলন ৬০-৭০ কেজি/শতাংশ গ্রীষ্মকালীন জাত।
বারি টমেটো-৫: ফলের ওজন ৪০-৫০ গ্রাম। ফলন ৬০-৭০ কেজি/শতাংশ গ্রীষ্মকালীন জাত।
বারি টমেটো-৬ (চৈতী: ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৭ (অপূর্ব): ফলের ওজন ১৪৫-১৫৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৮ (শিলা): ফলের ওজন ১০০-১১৫ গ্রাম। ফলন ৩৫০-৪০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৯ (লালিমা): ফলের ওজন ৭৫ গ্রাম। ফলন ৩৩০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১০ (অনুপমা): ফলের ওজন ২৫-৩০ গ্রাম। ফলন ১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা): ফলের ওজন ৮-১০ গ্রাম। ফলন ১৫০-১৮০ কেজি/শতাংশ এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ৬০-৯০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১২ (সিঁদুর): ফলের ওজন ৮০-৮৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১৪: ফলের ওজন ৯০-৯৫ গ্রাম। ফলন ৩৪০-৩৫০ কেজি/শতাংশ। আগাম শীত ও গ্রীষ্মের শুরূতে চাষযোগ্য। ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধী। ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত টমেটো সংগ্রহ করা যায়।

টমেটোর কয়েকটি উলেৱখযোগ্য জাতের ছবি নিম্নে দেয়া হলো-


চিত্রঃ বারি টমেটো-৯ চিত্র: বারি টমেটো-১১

জীবনকালঃ জাতভেদে ১২০-১৫০ দিন।
বীজ বপনের সময়ঃ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।
বীজের হারঃ প্রতি হেক্টরে ২০০ গ্রাম (১গ্রা/শতাংশ)।

চারা উৎপাদন পদ্ধতি
সবল চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে ৫০ গ্রাম সুস্থ বীজ ঘন করে প্রতিটি বীজতলায় (১মি×৩মি) বুনতে হয়।
এই হিসেবে প্রতি হেক্টরে ২০০গ্রাম (১গ্রাম/শতাংশ) বীজ বুনতে (গজানোর হার 80%) ৪ টি বীজতলার প্রয়োজন।
গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় ৪.৪ সেমিঃ দূরত্বে স্থানান্তর করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে টমেটো চাষের জন্য এরূপ ২২টি বীজতলার প্রয়োজন হয়।
বীজতলায় ৪০-৬০ মেস (প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০ টি ছিদ্র যুক্ত) নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উপোদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছি পোকার দ্বারা পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ ছড়ানোর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এরূপ সুস্থ সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপণ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে পলিথিন ও চাটাই এর আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে।

জমি তৈরি
টমেটোর ভাল ফলন অনেকাংশেই জমি তৈরির উপর নির্ভর করে। তাই ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১মি: চওড়া ও ১৫-২০ সেমি উচুঁ বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া নালা করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিস্কাশনের সুবিধা হয়।

সার প্রয়োগঃ নিম্ন বর্ণিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

সারের নাম

মোট পরিমাণ
(হেক্টর প্রতি)

মোট পরিমাণ
(শতাংশ প্রতি)

জমি তৈরীর সময়

১ম উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ১০ দিন পর)

২য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ২৫ দিন পর)

৩য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ৪০ দিন পর)

হেক্টর প্রতি

শতাংশ প্রতি

হেক্টর প্রতি

শতাংশ প্রতি

হেক্টর প্রতি

শতাংশ প্রতি

হেক্টর প্রতি

শতাংশ প্রতি

পঁচা গোবর

১০ টন

৪০ কেজি

১০ টন

৪০ কেজি

-

-

-

-

-

-

ইউরিয়া

৩০০ কেজি

১২০০ গ্রাম

-

-

১০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

১০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

১০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

টিএসপি

১৭৫ কেজি

৭০০ গ্রাম

১৭৫ কেজি

৭০০ গ্রাম

-

-

-

-

-

-

এমপি

১৫০ কেজি

৬০০ গ্রাম

১০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

-

-

২৫কেজি

১০০ গ্রাম

২৫ কেজি

১০০ গ্রাম

উপরের মাত্রায় গোবর ও রাসায়নিক সার শেষ চাষের আগে জমিতে ভাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। উপরি প্রয়োগের ইউরিয়া এবং এমপি সার গাছের গোড়ার ১০-১৫ সেমি দুরে দিয়ে মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ
চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন অথবা ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম এবং লাগানোর পর গোড়ায় হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
এক মি চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব ৬০ সেমি এবং সারিতে চারা থেকে চারা ৪০ সেমি দুরত্বে লাগাতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্যা
সেচ ও নিষ্কাশনঃ চারা রোপনের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিত চওড়া (৩০-৪০সেমি) এবং এক দিকে সমান ঢালু হওয়া বাঞ্চণীয়।
মালচিং: প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
আগাছা দমনঃ টমেটোর জমিকে প্রয়োজনীয় নিড়ানী দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সার উপরি প্রয়োগঃ সময়মত বর্ণিত মাত্রায় প্রয়োজনীয় সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষ পরিচর্যাঃ ১ম ফুলের গোছার ঠিক নীচের কুশিটি ছাড়া নীচের সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে।


পোকা ও রোগবালাই দমন

পোকামাকড়

সাদা মাছি পোকা
এরা পাতার রস চুষে খায় বলে পাতা কুঁকড়ে যায়।
এদের আক্রমণে পাতার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা বা হলদে দাগ দেখা যায়। পরে অনেক দাগ একত্রে মিশে সবুজ শিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যায়।
সাদা মাছি পোকার নিম্ফ রস খাওয়ার সময় এক ধরণের আঠালো মধুর মত রস নিঃসরণ করে। এ রস পাতায় আটকে গেলে তাতে সুটি মোল্ড নামক এক প্রকার কালো রং এর ছত্রাক জন্মায় ফলে গাছের সালোকসংশেৱষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।
হলুদ পাতা কোকড়ানো ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা
সহনশীল জাত যেমন বারি উদ্ভাবিত টিএলবি ১৩০, টিএলবি ১৮২ চাষ করা।
এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।
বীজতলা মশারীর নেট দিয়ে ঢেকে রাখা।
হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা।
আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি পরিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এস এল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি পরিমাণ) মিশিয়ে স্প্রে করা। তবে ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে এ পোকা কীটনাশকের প্রতি দ্রুত সহনশীলতা গড়ে তোলে।

রোগবালাই

ড্যামিপং অফ
ছত্রাকজনিত কারণে চারার গোড়ায় পানিভেজা দাগ হয়ে পচে যায়। অনেক সময় শিকড় পচে ও চারা মারা যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা
মুরগীর বিষ্ঠা/সরিষার খৈল বীজ বপনের তিন সপ্তাহ আগে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড (০.২%) দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

ঢলেপড়া রোগ
গাছের যে কোন বয়সে এ রোগ দেখা যায়।
আক্রান্ত গাছ যে কোন সময় ঢলে পড়ে যায়।
পুরো গাছটি দ্রুত মারা যায় ও ফলন কম হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে ধ্বংস করা।
রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।
বন বেগুন যথা টরভাম ও সিসিমিব্রফলিয়ামের সাথে জোড় কলম করা।

নাবী ধ্বসা/মড়ক
টমেটো গাছের পাতাতে কালো কালো দাগ দেখা যায় যা পানিতে ভিজা ভিজা মনে হবে।
আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা রংয়ের ছাতা (ছত্রাকজালি) পড়ে থাকতে দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা বা কান্ডে তুলার মত ছত্রাকজালির আবরণ দেখা যায়।
আক্রান্ত জমি থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়।
শেষ অবস্থায় এসে পাতা, কান্ড, শাখা সবই আক্রান্ত হয়ে গাছগুলো দেখতে সম্পূর্ণ পুড়ে যাবার মত মনে হবে।

দমন ব্যবস্থাপনা
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অথবা ঘন কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ৩-৪ দিনের বেশী চলতে থাকলে দেরী না করে ছত্রাকনাশক যেমন-রিডোমিল গোল্ড বা ম্যানকোজেব ব্যবহার করা। ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১ম বার স্প্রে করার ৩ দিন পর ২য় বার স্প্রে করতে হবে।
আক্রান্ত বছরের ফসল সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।

হলুদ পাতা কুঁকড়ানো
পাতার কিনারা থেকে মধ্যশিরার দিকে গুটিয়ে যায়।
পাতা খসখসে হয়ে শিরাগুলো স্বচ্ছ হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। পাতা পীতবর্ণ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়।
আক্রান্ত গাছের ডগায় ছোট ছোট পাতা গুচ্ছ আকার ধারণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা
চারা লাগানোর এক সপ্তাহ পর থেকে ৭-১০ দিন পরপর এডমায়ার নামক বিষ প্রয়োগ করে সাদা মাছি পোকা দমন করতে হবে।
টমেটোর জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে।
ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত (প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৪০-৬০ টি ছিদ্র) নাইলনের নেট দিয়ে বীজতলা ঢেকে চারা উৎপাদন করতে হবে।
ফল সংগ্রহের দুই সপ্তাহ আগেই স্প্রে বন্ধ করতে হবে।

বীজ উৎপাদনের জন্য করণীয় কাজগুলো
রোগিং: পাতার রং, আকার, আকৃতি, গাছের উচ্চতা, ফলের রং, আকার, আকৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কোন গাছ ভিন্নতর মনে হলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলতে হবে। টমেটো বীজ ফসলের মাঠ কমপক্ষে ৩ বার পরিদর্শন করতে হবে। ফুল আসার আগে প্রথম পরিদর্শন, ফুল আসা ও ফল ধরার সময় দ্বিতীয় পরিদর্শন এবং ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় তৃতীয় পরিদর্শন করতে হয়।

পরাগায়নঃ টমেটো একটি স্বপরাগায়িত ফসল হলেও ২-৫% পরপরাগায়ন ঘটে থাকে। বীজ ফসলের জমি অন্য জাতের জমি থেকে ৫০ মিটার দূরত্ব রাখলে বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন হবে।

বীজ ফল চিহ্নিতকরণ ও সংগ্রহঃ রোগাক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্থ বা পঁচা ফল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সুস্থ স্বাভাবিক ফল বীজের জন্য বাছাই করে আলাদাভাবে সংগ্রহ করতে হবে। ফলের রং গাঢ় লাল হলেই ফল সংগ্রহ করা উচিত। অতপর সংগ্রহকৃত ফলগুলো ২-৩ দিন রেখে দিতে হয়।

বীজ সংগ্রহ ও শুকানোঃ বাছাইকৃত ফলগুলো, আড়াআড়িভাবে কেটে মাটি অথবা প্লাষ্টিক পাত্রের উপর হাত দিয়ে চেপে বীজ বের করে নিয়ে ২০০-২১০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২৪-৩৬ ঘন্টা ফারমেনটেশনে রাখতে হবে। এ সময়ে মাঝে মাঝে বীজ নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে বীজগুলো সহজে ফলের আঠালো অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের পরে বীজগুলো বারবার পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ভাসমান বীজ বাতিল করতে হবে। বীজ ভালভাবে ধোয়ার পর প্রথমে ছায়ায় পরে ক্রমান্বয়ে প্রখর রৌদ্রে অধিক্ষণ শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ৮% এ নামিয়ে আনতে হবে।

বীজ ফলন: হেক্টর প্রতি ১৫০-১৬০ কেজি (৬০০-৬৪০ গ্রাম/শতক) পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের কৃষি খাতের নিম্নলিখিত সম্ভাবনা ও সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করেছে।

সম্ভাবনাসমূহ
* মোট জাতীয় উৎপাদনে একক বৃহত্তম খাত হিসেবে কৃষিই সর্বাধিক অবদান রাখছে
* শস্য উৎপাদন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে শ্রমঘন এবং কৃষি খাতে বিদ্যমান উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি
* দক্ষ ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান কৃষি খাতই বৃহত্তম উৎস
* বছরব্যাপী বিদ্যমান অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ
* জৈব বৈচিত্র্যের ব্যাপক সমাহার
* বিভিন্ন প্রজাতির শস্য এবং কৃষিজ উৎপন্ন হলো আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের প্রধান উৎস
* কৃষিজাত উৎপন্নের ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎপাদনের চেয়ে অধিকতর মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে

সমস্যাসমূহ
* কৃষি ব্যবস্থা প্রকৃতির খেয়াল খুশির ওপর নির্ভরশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ
* আবাদযোগ্য ভূমির লভ্যতা ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে
* কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক দারিদ্র্য
* কৃষি কাজের অন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব
* কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতা
* অনুন্নত ও দুর্বল বাজার ব্যবস্থার কারণে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা
* কৃষিজ উৎপন্নসমূহ দ্রুত পচনশীল এবং ফসল-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অত্যধিক
* ফল এবং শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপন্নের পুষ্টিমান সমন্ধে সাধারণ মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান

বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি নিশ্চিতকল্পে উল্লিখিত সমস্যা ও সম্ভাবনাসমূহকে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো আর সমস্যাকে মোকাবিলা করা এ দুই-ই হলো উন্নয়নকে গতিশীলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান শর্ত। আমাদের অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা সাপেক্ষে, সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলোর যথার্থ বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে হবে যে, কোন সম্ভাবনাকে আমরা এখন কাজে লাগাব এবং কোন সমস্যাটিকে বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ শুরু করব। জনতার সর্বোচ্চ উপকারের নিশ্চয়তা বিধানের প্রত্যয় এবং বিবেচনা থেকেই অগ্রাধিকারের ক্রম ঠিক করা জরুরি।
জৈব বৈচিত্র্য আমাদের দেশ এবং মানুষের অমূল্য সম্পদের উৎস। আমাদের দেশে বিদ্যমান বিপুল জৈব বৈচিত্র্যের সুরক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বের দিক থেকে শীর্ষস্থানের দাবিদার। কেননা, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা পরিচালিত উদারীকরণও বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ (TRIPs) বিধানের সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আমাদের কৃষিজ জৈব সম্পদ ও প্রাণ সম্পদ প্যাটেন্ট অধিকারের মাধ্যমে লুট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে। এই হুমকির মোকাবিলা এবং বিদ্যমান বিপুল জৈব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার্থে অবিলম্বে জীবনব্যাঙ্ক স্থাপন ও দেশের বিদ্যমান উদ্ভিদ, শস্য ও প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ কৃষি ঐতিহ্যের দেশ। সুদীর্ঘ কালব্যাপী কৃষিকাজের চর্চার মধ্য দিয়ে এ দেশের কৃষকসমাজ যে বিপুল কৃষিজ জ্ঞানকে সংরক্ষিত ও বিকশিত করে চলেছে সে কৃষিজ জ্ঞানগুলোকে মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দস্যুতার হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে। কৃষি সংক্রান্ত ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান সম্পদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য জাতীয় কৃষি নীতিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও কার্যকর কৌশল প্রণয়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
উন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার স্বার্থে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন প্রকার ভর্তুকি, উচ্চ শুল্ক হার, আমদানি কোটাসহ একগুচ্ছ অন্যবিধ রক্ষণশীল পদক্ষেপকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্যমতে, উন্নত দেশগুলোর এই রক্ষণশীলতার অবসান হলে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মোট জাতীয় উৎপাদন একলাফে ৩০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে। উন্নত দেশগুলোর এই কৃষি ভর্তুকি দশক দশক ব্যাপী কৃষি বাণিজ্যসহ বাণিজ্য উদারীকরণের ক্ষেত্রে এমন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে যার ফলে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো বাণিজ্য সুবিধা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্পোন্নত দেশগুলো রফতানি খাতে ভর্তুকি হিসেবে বার্ষিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। গম, ময়দা, পনির, মাখন, পোলট্রি এবং গবাদিপশুর মাংস রফতানিতে এই ভর্তুকি ব্যবহৃত হচ্ছে। বুশ প্রশাসন প্রণীত ২০০২ সালের কৃষি বিলে ১৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে আগামী দশ বছর কৃষি ব্যয় নির্বাহের জন্য। বরাদ্দকৃত এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির অর্থে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সরকারি সংগ্রহ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষিজ উৎপন্নসমূহ কিনে নেওয়া হবে। ফলে বিশ্ববাজারে কৃষি পণ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে সংকুচিত হবে এবং বিপুলসংখ্যক দরিদ্র কৃষককে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে। কৃষি পণ্যের এই অব্যাহত ডাম্পিং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনকেও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

উন্নত দেশগুলো উল্লিখিত পদক্ষেপ ছাড়াও গ্রিন বক্স সহায়তার বিধানকে ব্যবহার করে তাদের কৃষি ভর্তুকি অব্যাহত রাখছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তির বিধান অনুযায়ী যে সকল ভর্তুকি অত্যাবশকীয়ভাবে কমিয়ে আনার শর্ত রয়েছে সেগুলোকে সাধারণ সহায়তা কার্যক্রম থেকে সরিয়ে গ্রিন বক্সে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্যে দিয়ে এই চাতুর্যপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৯৫ সালে কৃষি চুক্তি বাস্তবায়নের ভিত্তি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সমষ্টিভূত কৃষি সহায়তা ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নে। অন্যদিকে গ্রিন বক্স সহায়তা বৃদ্ধি পায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্রিন বক্স সহায়তা কার্যক্রমের সুযোগকে নির্বিচারভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে চলছে উন্নত দেশগুলো। ১৯৯৬ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো গ্রিন বক্স কার্যক্রমে ব্যয় করছে মাত্র ১২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো একই সময়ে ৮৭.৫ শতাংশ গ্রিন বক্স সহায়তা ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশের কৃষি খাতঃ যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা
খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণতা, মোট জাতীয় উৎপাদনের বিপুল অবদান এবং সর্বাধিকসংখ্যক কর্মসংস্থানের উৎস হওয়া সত্ত্বেও দেশের সার্বিক চাহিদা ও কৃষির বর্তমান উৎপাদনের মধ্যে এখনো বিপুল পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। দেশেল প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যের তালিকাটিতে নজর ফেরালে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যের তালিকা (মিলিয়ন টাকায়)


প্রধান দ্রব্যাদি

১৯৯৫-৯৬

১৯৯৬-৯৭

১৯৯৭-৯৮

১৯৯৮-৯৯

১৯৯৯-০০

দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য (অশোধিত)

২১৩৯

২৯০৪

২৫৬৪

২৮০৮

৪০৬৮

চিনি

৪৪৯

২৬০৬

২০১৭

২০০২

১৬০৭

চাউল

১০৫৬৬

১৭৫১

১১১৮২

২৫৭৫৮

৩৩৬৬

গম

৭০০৬

৮৮২৪

৬৮২৬

১৭২০৪

১২৫৩১

তুলা

৬৩২২

৮২৮৬

১০৭৮৪

১২৩১৫

১৪৮৫২

জ্বালানি তেল (অশোধিত)

৬৪৯২

৭৯৭৭

৮০৪১

৭৯৩৮

৭৪১৭

জ্বালানি দ্রব্যাদি

১১৫৩৫

১৬৭০৫

১৫২৮২

১৭৩২৬

২১৬২৬

সার

২৫৯৪

৫৫৪৯

৫০৫৩

৫১৩১

৫৯১৩

সিমেন্ট

৭৮৫৩

৮৯৪১

১০৯৪৭

৯১৮৪

৯১২৫

ভেষজ তেল

১৩২৯৬

১৯২১৮

৯৭৯৩

১৩৫৪৮

২৬১৪৯

লৌহ ও ইস্পাত

১০৩৫৪

১৬৮২০

১৭৬২১

১৭৮৪২

১৬৪৪৩

প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি

৩২০৮৩

৪১৪৮৫

৪১৯৬৪

৩৯৮২৬

৪২৮১০

বস্ত্র তৈরির সুতা (সুতি, কৃত্রিম)

১৫০৮১

২৮৬৭০

১৭৮৮৯

১২৪৮২

৫৮৪৫

বস্ত্র (সুতা এবং কৃত্রিম)

৩১২১৬

১০২২৪

৪১৫৪১

৩৭১২০

৩৫০২৮

তথ্য সূত্রঃ ফরেন ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্স অব বাংলাদেশ ১৯৯৯-২০০০, ভলিউম-২

দেশের প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের এই তালিকায় উল্লিখিত কৃষিপণ্যগুলোর মোট আমদানি ব্যয় একই সময় আমদানিকৃত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদির মোট ব্যয়ের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়। কৃষিপণ্য আমদানির এই পরিমাণ দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের সুতা ও বস্ত্র আমদানির মোট পরিমাণের চেয়েও বেশি।

১৯৯৫-৯৬ থেকে ১৯৯৯-০০ এই পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেলেও দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, চিনি, গম, তুলা, সার ও ভোজ্য তেলের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত বাস্তবভাবে অনুধাবন করা যায় যে, দেশে কৃষির অগ্রগতির বিষয়টি এখনো পর্যন্ত একটি সুষম উন্নয়নের ভিত্তি ভূমির ওপর দাঁড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশের গৃহীত কৃষি নীতিতেও এর প্রতিফলন চোখে পড়বে। কৃষিনীতির ভূমিকায় বলা হয়েছে ‘সার্বিকভাবে কৃষির আওতায় ফসল উৎপাদন, মৎস্য, পশুসম্পদ, পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হলেও ইতোমধ্যে মৎস্য, পশুসম্পদ, পরিবেশ ও বনবিষয়ক পৃথক নীতিমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষি মন্ত্রণালয় সার্বিক কৃষির সর্ববৃহৎ খাত হিসেবে ফসল সংশ্লিষ্ট যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঠিক দিকনির্দেশনামূলক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সঙ্গত কারণেই এতে ফসল উৎপাদন, বিপণন এবং উৎপাদনের চালিকাশক্তি হিসেবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন, বীজ, সার, কৃষি ঋণবিষয়ক নীতিমালা প্রাধান্য পেয়েছে। যেহেতু, বাংলাদেশের কৃষিতে ফসল খাতই এখনো মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে এবং কৃষি উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় সরকারি কর্মকাণ্ডে এ খাতটি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে, সেহেতু ফসল খাতের উন্নয়নবিষয়ক নীতিমালাকে ‘জাতীয় কৃষিনীত’ নামে অভিহিত করা হলো। একটি ব্যাপক উৎপাদন ক্ষেত্রকে পৃথকীকরণ, পৃথক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদানের ফলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অথবা আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন না করার আশঙ্কা বিদ্যমান থাকে। ফসল খাতের তুলনায় দেশের মৎস্য, পশুসম্পদ বা বনজ খাতের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনা করলে আশঙ্কাটি আরো জোরদার হয়ে ওঠে। জাতীয় কৃষিক্ষেত্রে টেকসই ও কার্যকর উন্নয়ন সম্ভব করে তোলার জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয় (মৎস্য ও পশুসম্পদ, বন ও পরিবেশ) ও সংস্থাকে একযোগে কাজ করার মধ্যে দিয়ে একটি সমন্বিত ও বহুমুখী জাতীয় কৃষি উন্নয়ন কৌশল প্রবর্তন করতে হবে, যার মাধ্যমে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জনকে সম্ভব করে তোলা যাবে। এই সমন্বিত ও বহুমুখী কর্মকৌশলের অন্তর্ভুক্ত হবে বিশ্বায়ন ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তিসহ আরও বিভিন্ন আইন-কানুন, যেগুলো কৃষিতে প্রভাব ফেলতে পারে (যেমন, বাণিজ্য সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ চুক্তি) সেগুলোকে মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন ও এর বহুমুখী প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

উন্নত দেশগুলোর কৃষি খাতে অব্যাহত ভর্তুকি এবং উদ্বৃত্ত কৃষিজপণ্য আমাদের মতো দেশগুলোর বাজারে অবারিতভাবে ডাম্পিংকে মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন করা অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর আগ্রাসী নীতির মোকাবিলা এবং নিজেদের কৃষি সুরক্ষার স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে হলে আমাদের দেশেও দরিদ্র কৃষকদের উৎপাদন সহায়তা, ফসলের ন্যায্য মূল্যে নিশ্চিতকল্পে মূল্য সহায়তা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় কৃষিজ উৎপণ্যের স্থানীয় মজুদ গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান, জীবন ব্যাংক স্থাপন এবং দেশীয় উদ্ভিদসহ মূল্যবান কৃষিজ প্রজাতিগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষিজপণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রফতানি সহায়তা প্রদানের মতো বিষয়গুলোকে জাতীয় কৃষি উন্নয়ন কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কৃষির উন্নতিরই কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বাধিক কার্যকর অবদান রাখতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ
১। গ্যাট, উরুগুয়ে রাউন্ড ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা, ইনসিডিন বাংলাদেশ-১৯৯৮
২। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাঃ কৃষি চুক্তি, ইনসিডিন বাংলাদেশ, ২০০২
৩। WEB-SITE, Ministry of Agriculture, GOB
৪। জাতীয় কৃষি নীতি, কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
৫। Briefing paper on Agreement on Agriculture, Law and Society Trust Srilanka
৬। Foreign Trade Statistics of Bangladesh, 1997-2000
৭। OXFAM Briefing paper Running into the sand watkings kevin, August-2003

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং ইনসিডিন বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইনসিডিন বাংলাদেশের এডভোকেসি চিফ নাসিমুল আহ্‌সান বার্তাপত্রটি প্রস্তুত করেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইনসিডিন বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় প্রস্তুত বার্তাপত্র থেকে সংকলিত