মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০১০

জেলা কৃষি ঋণ কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংক

আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংক জেলা কৃষি ঋণ কমিটির সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। একইসাথে যে সকল বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ করে তারাও উপস্থিত থাকতে পারবে। আর বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোকে জেলা কমিটির সভার জন্য তাদের প্রতিনিধি মনোনীত করে লীড ব্যাংকে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রানত্ম একটি সার্কুলার জারি করে সকল তফসিলী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, লীড ব্যাংক পদ্ধতির (কোনো ইউনিয়নে কোন রাষ্ট্রীয় ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করার ক্ষ্যমতাপ্রাপ্ত ব্যাংক লীড ব্যাংক) লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বিদ্যমান কাঠামো অন্যান্য সকল দিক অপরিবর্তিত রেখে জেলা কৃষি ঋণ কমিটিতে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সিদ্ধানত্ম হয়েছে।

সার্কুলারে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশিস্নষ্ট জেলায় বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের শাখা বা জোনের প্রধান জেলার কৃষি ঋণ কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করবে। বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য মনোনীত এনজিও কৃষি ঋণ জেলা কমিটির সভায় উপস্থিত থাকবেন। তবে কৃষি ঋণ বিতরণের সকল তথ্য নিয়ে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, সকল ব্যাংকের অংশগ্রহণে কৃষি কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার বর্তমান প্রক্ষাপটে কৃষি কার্যক্রমকে আরো সমন্বিত ও কার্যকর করার লক্ষ্যে যে জেলা কৃষি ঋণ কমিটিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলো প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। উল্লেখ্য, এর আগে জেলা কৃষি ঋণ কমিটি বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে পারতো না।

সম্ভাবনার ফল ড্রাগন








সম্ভাবনার ফল ড্রাগন
ড. জে সি মালাকার

ড্রাগন ক্যাকটাস গোত্রের একটি ফল। ড্রাগন ফলের গাছ লতানো ইউফোরবিয়া গোত্রের ক্যাকটাসের মতো; কিন্তু এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখে সবাই একে চিরসবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম ড্রাগন ফল ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রবর্তন করেন। প্রফেসর ড. এম. এ. রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। ড্রাগন ফলের (Hylocereus undatus) উৎপত্তিস্থল সেন্ট্রাল আমেরিকা। ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।

ড্রাগন ফুল রাতের রানি
ড্রাগন গাছে ফুল ফোটে রাতে। দেখতে অনেকটা নাইট কুইন ফুলের মতো, লম্বাটে, সাদা ও হলুদ। ড্রাগন ফুলকে 'রাতের রানি' নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ফুল স্বপরাগায়িত; তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড়ের পরাগায়ণ ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়ণও করা যেতে পার

লিচুর রোগ প্রতিকার ও সার ব্যবস্থাপনা

লিচুর রোগ প্রতিকার ও সার ব্যবস্থাপনা

লিচুগাছে প্রচুর ফুল আসার পরও নানা কারণে ফুলের দুই ভাগ ঝরে যায়। ফুল আসা, ফুল টিকে থাকা এবং ফুলের স্বাস্থ্য বহুলাংশে সার ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ গাছের গোড়ায় ফেব্রুয়ারিতে একবার, মে মাসে আরেকবার এবং আগষ্ট মাসে আরেক বার সার দিলে লিচুর ফুল ও ফল ধারণক্ষমতা বাড়ে।
হরমোন প্রয়োগঃ হরমোন প্রয়োগের ফলে ফুলঝরা বন্ধ হয়। সেচ দিলে ফল হয় স্বাস্থ্যবান। স্বাদ হয় কাঙিক্ষত। লিচুর ভালো ফলন পাওয়ার কৌশলগুলো নিচে দেওয়া হল:

সার ব্যবস্থাপনাঃ গাছের গোড়ায় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সার ছিটিয়ে দিতে হবে। সার ছিটানোর পরে সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বাড়ে। গাছের বয়স যত বেশি সারের পরিমান তত বেশি হয় দুপুরে গাছের ছায়া যতটুকু স্থান দখল করে নেয় ঠিক ততটুকু জায়গা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে গাছের বয়স সাত থেকে দশ বছর হলে গাছ প্রতি পয়তাল্লিশ কেজি গোবর, সাড়ে সাত শ’ গ্রাম ইউরিয়া, এমপি পাচঁ শ’ গ্রাম, টিএসপি সাত শ’ গ্রাম ছিটিয়ে দিতে হবে।

গাছের বয়স দশ বছরের ওপর হলে পচা গোবর ষাট কেজি, এক কেজি পাচঁ শ’ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং টিএসপি এবং এক কেজি এমপি সার দিতে হয়। পাতার রঙ তামার মতো হলে একশ’ লিটার পানির সঙ্গে এক কেজি জিস্ক সালফেট (জিপসাম) ও পাচঁশ’ গ্রাম চুন মিশিয়ে গাছে ফুল আসার সময় স্প্রে করে দিতে হবে।

ফলঝরা রোধে হরমোনঃ ফল ঝরা রোধ করতে নিয়মিত সেচ ও সঠিক মাত্রায় সার দেওয়ার পরও হরমোনের অভাবে এলেও তা ঝরে যেতে পারে। ফুলঝরা বন্ধ করতে প্লানোফিক্স নামের হরমোনেটির এক মিলি পাচঁ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে দুই থেকে তিনবার।

রোগ-পোকামাকড়
রোগঃ কখনো কখনো পাউডারি মিলডিউ রোগের কারণে ফুলের গোছায় সাদা সাদা পাউডারের মতো ছত্রাকের আবরণ পড়ে। এতে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। অ্যানথ্রকনোজ রোগে মাঝেমধ্যে ফুল ও ফল বাদামি বর্ণের হয়ে ঝরে পড়ে। অ্যানথ্রকনোজ দমনে ডায়থেন এম ৪৫ এবং পাউডারি মিলডিউ রোগ দমনের জন্য থিওভিট ওষুধের দুই গ্রাম আলাদা করে দশ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে দশ দিন পরপর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করে দিতে হবে।

পোকাঃ খুব ছোট ও সাদা সাদা লিচুর মাইট বা মাকড় লিচুর ক্ষতি করে। এই মাকড়গুলো পাতার নিচের সবুজ অংশ খেয়ে বাদামি রঙের ভেলভেট তৈরি করে। আক্রান্ত গাছের পাতায় মেটাসিসটক্স দুই গ্রাম দশ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলেই মাইটকে দমন করা যায়।
প্রতিবেদক: সিদ্দিকুর রহমান শাহীন,প্রভাষক,কৃষিশিক্ষা
নাওডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, ফুলবাড়ী,কুড়িগ্রাম।

স্ট্রবেরি গাছে গোড়াপচা রোগ ও করনীয়

স্ট্রবেরি গাছে গোড়াপচা রোগ ও করনীয়

লতানো গাছে ঝুলে আছে লাল টকটকে ফল। মনকাড়া এ ফলটি দেখলে কার না খেতে মন চায়। দক্ষিণ আমেরিকার ভার্জিনিয়া, ইউরোপের চিলিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাঙালির মনও জয় করেছে ওই ফলটি। নাম তার স্ট্রবেরি। ১৯৯৬ সালে স্ট্রবেরির আগমন ঘটে বাংলাদেশে এবং ২০০৭ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে এর চাষ। ইতিমধ্যে সারাদেশের প্রায় সব জেলায় এর চাষ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ফলটির খাপ খাবে কিনা চিন্তা করা হয়নি একবারও। এ বছর সারাদেশে চাষকৃত প্রায় ৮৫ শতাংশ স্ট্রবেরি গাছ মড়ক লেগে মারা গেছে। টাকার অঙ্কে যার ক্ষতির পরিমাণ হেক্টরে ৪৫ লাখ। বিশেষজ্ঞরা এটাকে টিস্যু কালচার পদ্ধতির ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। খোদ উদ্ভাবক এটাকে স্বীকার করে নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় স্ট্রবেরি কতটা খাপ খাচ্ছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ঠিক কি কারণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে তা উদ্ভাবকসহ কারো কাছে এতদিন বোধগম্য ছিল না। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা স্ট্রবেরির মড়ক লাগার কারণ নির্ণয় করেছেন এবং তা প্রতিকারের পথও খুঁজে পেয়েছেন। যা ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে ব্যবহার করে কৃষকরা সুফল পেয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম বাহাদুর মিঞা এবং অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ বছরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় রোপণ করা হয় স্ট্রবেরি ফলের চারা। রোপণের কিছুদিন পর থেকেই দেখা দেয় অজ্ঞাত এক রোগ। বিগত এক মাস ধরে এ রোগটি ব্যাপক আকারে দেশের চাষকৃত বিভিন্ন স্ট্রবেরির বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে চাষকৃত স্ট্রবেরির ৬০ থেকে ৮৫ ভাগ ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সঠিক নির্দেশনার অভাবে বাকি চারাতেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। চাষকৃত কৃষকরা প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এই রোগটিকে প্রথমে শনাক্ত ও প্রতিকারের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর নমুনা নিয়ে আসেন লালমনিরহাটের প্লান্ট বাংলাদেশ নার্সারি থেকে কৃষিবিদ মো. সেলিম। উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের এই ক্লিনিকে রোগটি শনাক্ত ও এর প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান করেন। প্রত্যক্ষভাবে রংপুর, লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জের বিভিন্ন নার্সারিতে এই রোগটি পর্যবেক্ষণ করেন এবং নমুনা সংগ্রহ করে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায় আক্রান্ত গাছের ক্রাউন/গোঁড়া অংশে টানলে/কাটলে কমলা লাল থেকে গাঢ় বাদামি লাল রঙ দেখা যায় এবং আক্রান্ত অংশ থেকে কিছুটা দুর্গন্ধ বের হয়। দেখা গেছে এক ধরনের জীবাণু স্ট্রবেরি গাছের ক্রাউনের এক প্রান্ত থেকে আক্রমণ শুরু করে যা গাছের ওপর থেকে বোঝা যায় না। তারপর ক্রমান্বয়ে গাছের ক্রাউন অংশ পচে গেলে গাছটি হঠাৎ করে ঢলে পড়ে এবং পাতা হলুদ বা বাদামি হয়ে যায়। রোগটি প্রধানত চযুঃড়ঢ়যঃযড়ৎধ পধপঃড়ৎঁস দিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। তবে ২/১ জায়গায় Phytophthora এবং Fusarium- এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা এটিকে অভিহিত করেছেন Crown rot গোড়াপচা রোগ।

ড. বাহাদুর মিঞা জানান, এ পর্যন্ত রংপুরের ঈশ্বরপুরে প্রায় ৮৫ ভাগ, হাতিবান্ধায় ৬০ ভাগ, কালিগঞ্জে ৪০ ভাগ, মুক্তাগাছায় ৫০ ভাগ এবং রাজশাহীতে ৬৬ ভাগ স্ট্রবেরি গাছ এ রোগে মারা গেছে। টিস্যু কালচার করার সময় সব ধরনের সতর্কতা সঠিকভাবে অবলম্বন করা হয়নি, কাজেই ওই উৎস থেকেই এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার গোপাল রায় গ্রামের হক নাসারির স্বত্বাধিকারী নুরুল হক জানান, ৫০ শতক জায়গায় ৬ হাজার স্ট্রবেরি গাছ রোপণ করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদের কাছ থেকে প্রতি চারা ১৫ টাকা দরে ক্রয় করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তার প্রায় ৮৫ ভাগ চারা মারা গেছে। সাধারণত ১টি স্ট্রবেরি গাছ থেকে ২৫০-৫০০ গ্রাম স্ট্রবেরি ফল বিক্রি করা যায়। প্রতি কেজির মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা। গড়ে গাছ প্রতি ২৫০ ফল এবং এক হাজার টাকা কেজি দাম বিবেচনা করলে আমার এ বছর হেক্টরে ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া কুষ্টিয়ার কামরুজ্জামান, মুক্তাগাছার নূর হোসেন, হাতিবান্ধার গোছর আলী একই অভিযোগ করে বলেন, গত বছর তাদের স্ট্রবেরিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এ বছর তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
রংপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আলী আজম বলেন, সদরের চন্দর পাঠ ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামের একটি স্ট্রবেরি খামারে প্রায় ৯০ ভাগ গাছ মারা গেছে। আমরা কোনো প্রতিকার খুঁজে পাচ্ছি না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানেন এ মড়কের জন্য চারার উৎসই দায়ী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদের টিস্যু কালচার পদ্ধতির ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে। তিনি চারা তৈরির পর এগুলোকে লাল মাটিতে রাখেন। যেখানে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তাছাড়া লাল মাটি অনেক শক্ত হওয়ার কারণে চারা গাছের মূল শিকড় বড় হতে পারে না। ফলে এগুলোকে জমিতে লাগানোর পর মারা যায়। তিনি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটা কতটা উপযোগী সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন।

পরীক্ষামূলকভাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে রাবি-১, রাবি-২ এবং রাবি-৩ নামে তিনটি স্ট্রবেরি জাত ২০০৭ সালে উদ্ভাবন করা হয়। পরে ওই বছরই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ চারা টিস্যু কালচার গবেষণাগার থেকে বিক্রি করেন। তাছাড়া কৃষকরা মাতৃগাছ থেকে আরো লাখ লাখ চারা উৎপাদন করে এ বছর চাষ করেছেন।

কৃষকদের স্ট্রবেরি চারায় মড়ক সম্পর্কে বলেন, ব্যাপারটি সত্য। আমরা শুনছি গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। পরে হঠাৎ কা- ভেঙে মারা যাচ্ছে। এজন্য আমরা কৃষকদের Ruvral, Bavistin, Cupravit, Tilt, Secme, Volkan, Antachlor, Haynaxy, Gilzim ইত্যাদি ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। সত্যি বলতে রোগের নামটাই ধরতে পারছি না। সেহেতু, কাজেই সঠিক প্রতিকার দিতে পারছি না। কৃষকরাও কোনো সুফল পাচ্ছে না। রংপুরের সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, মনে হচ্ছে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে জাপান থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে ফলটি নতুন, তাই খাপ খেতে সমস্যা হচ্ছে। এখানে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, আমার তৈরি করা চারায় নাকি কৃষকদের কাটিং করা চারায় এ সমস্যা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। ড. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, মাটির পিএইচ এর তারতম্যের কারণেও এমনটি হতে পারে।

ড. বাহাদুর মিঞা বলেন, বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে সহয়তা করবে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা করে মাঠপর্যায়ে নিয়ে গেলে ভালো হতো।

এই রোগটি প্রতিকারের জন্য প্রথমে সেপানীল ০.১ ভাগ্র করতে হবে। সেপানীল প্রয়োগের দুদিন পর ১ মন ছাই, ১ কেজি পটাশ সার, ১/২ কেজি রিডোমিল মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ১ মুঠো করে দিতে হবে। তবে এর সঙ্গে আইপিএম ল্যাব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত Trichoderma বায়োপেস্টিসাইড প্রতি গাছের গোড়ায় ১০ গ্রাম করে দিলেও প্রতিকার পাওয়া যাবে। বর্তমানে মুক্তাগাছা, হাতিবান্ধা এবং কালিগঞ্জের নার্সারিতে এই ব্যবস্থাপনার দ্বারা রোগাক্রান্ত জমিকে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে। লালমনিরহাটের নুরুল হকও বলেন, প্লান্ট ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের এ প্রতিকার পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি সুফল পাচ্ছেন।
লেখক: মো. শাহীন আলম
তথ্যসূত্র: দৈনিক ডেসটিনি

সূর্যমুখী ফুলের চাষ

সূর্যমুখী ফুলের চাষ
সূর্যমুখী ফুল

সূর্যমুখী উৎকৃষ্ট তেল জাতীয় ফসল। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে এবং ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের চাষীরা এর আবাদ শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।

জমি তৈরি:
সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হয়। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

জাত নির্বাচন:
সূর্যমুখীর কিরণী (ডিএস-১) জাতটি সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভবন করা হয় এবং ১৯৮২ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছর উচ্চতা ৯০-১১০ সে.মি.। বীজ লম্বা ও চেপ্টা। এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফসল পাওয়া যায়।

বপন পদ্ধতি ও বীজের হার:
সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সে.মি. রাখতে হয়। এভাবে বীজ বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগ:
হেক্টর প্রতি ইউরিয়া ১৮০-২০০ কেজি,
হেক্টর প্রতি টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি,
হেক্টর প্রতি এমপি ১২০-১৫০ কেজি,
হেক্টর প্রতি জিপসাম ১২০-১৭০,
হেক্টর প্রতি জিংক সালফেট ৮-১০ কেজি,
হেক্টর প্রতি বরিক এসিড ১০-১২ কেজি,
হেক্টর প্রতি ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৮০-১০০ কেজি।
ইউরিয়া সারের অর্ধেক এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর বা ফুল ফোটার আগে প্রয়োগ করতে হবে।

রোগবালাই ও প্রতিকার:
আমাদের দেশে সূর্যমুখীর রোগের মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অলটারনারিয়া হেলিয়াস্থি নামক ছত্রাকের আক্রমণে সূর্যমুখীর এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রথমে পাতায় ধূসর বা গাঢ় বাদামি বর্ণের অসম আকৃতির দাগ পড়ে। পরে দাগ মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। অবশেষে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়।

এছাড়াও সূর্যমূখীর আকেটি রোগ হল শেকড় পচা রোগ। সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান- গাছের গোড়া সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার দানার মত স্কেলেরোশিয়াম দেখা যায়। প্রথমে গাছ কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়।

প্রতিকারের জন্য রোগ সহনশীল কিরণী জাত চাষ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডবি্লউ পি (২% হারে) পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে যায়। ফসল কাটার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ নষ্ট করলে বা পুড়িয়ে ফেললে এ রোগের উৎস নষ্ট হয়ে যায়।

সূর্যমুখীর শিকড় পচা রোগের প্রতিকার হিসেবে ভিটাভেক্স-২০০ এর সাহায্যে মাঠ শোধনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। সাধারণত জমি পানি সিক্ত থাকলে এ ছত্রাক বাঁচতে পারে না। সুতরাং রোগ আক্রমণের পর জমিতে প্লাবন সেচ দিয়ে প্রকোপ কমানো যায়। পর্যায়ক্রমিকভাবে ফসলের চাষ করলে উপযুক্ত পোষক গাছের অভাবে পূর্ববর্তী আক্রমণকারী রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।

বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে।

লেখক: সাহারা তুষার
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

বিনা তিল-১ চাষ পদ্ধতি bina til

বিনা তিল-১ চাষ পদ্ধতি
bina til

বাংলাদেশে তিল দ্বিতীয় প্রধান তৈল বীজ ফসল হিসেবে পরিগণিত। তিলের তেলের স্বাদ ও গন্ধ সুমিষ্ট এবং পচনরোধী উঁচুমানের ভোজ্য তেল। খাদ্য হিসেবেও তিল বীজ জনপ্রিয়। একক বা মিশ্র ফসল হিসেবেও স্ব-পরাগায়ণ প্রকৃতির উদ্ভিদ। তিল চাষ করে কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা পুষ্টি সমস্যা নিরসনে এটি অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ধান ভিত্তিক ফসল পরিক্রমায় তিল চাষে কোন অসুবিধা হয় না।

বিদেশ হতে সংগৃহীত একটি জার্মপ্লাজমে গামারশ্মি প্রয়োগ করে উন্নত লাইন নির্বাচন এবং নির্বাচিত লাইনটিকে দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশে অঞ্চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিনা তিল-১ নামে নতুন এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ জাতটি স্থানীয় আবাদি জাত টি-৬ অপেক্ষা প্রায় দেড়গুণ বেশি ফলন দেয়।

বিনা তিল-১ এর গাছ শাখাবিহীন এবং পাতার রঙ ঘন সবুজ। প্রতিটি গিরায় ৩-৬ বড় আকারের লম্বা ফল ধরে। বীজাবরণ পাতলা, নরম ও ক্রীম রঙের বিধায় খোসা না ছড়িয়েও কারখানা বা বেকারিতে সরাসরি ব্যবহার করা যায়। বেকারিতে বিনা তিলের চাহিদাও প্রচুর। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৫০-৫২ ভাগ। জীবনকাল ৮৫-৯০ দিন। গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১৩০০ কেজি (একর প্রতি ৫৩০ কেজি বা বিঘা প্রতি ১৭৫ কেজি)।

বাংলাদেশের উপকূলীয় বিশাল লবণাক্ত এলাকা বছরের প্রায় ছমাস (ডিসেম্বর থেকে জুন) পতিত থাকে। এ সময়ে অর্থাৎ খরিফ-১ মৌসুমে বিনা তিল-১ এর লবণাক্ততা সহিষ্ণুতার কারণে এর চাষ করে বাংলাদেশে তেলবীজের বিরাট ঘাটতি বহুলাংশে লাঘব করা যেতে পারে। দেশের বৃহত্তম জেলাসমূহ যেমন- ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর, জামালপুর ও পার্বত্য জেলাসমূহে বিনা তিল-১ চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যেতে পারে। আউস ধান, আখ ও গ্রীষ্মকালীন মুগের সাথে সাথী ফসল হিসেবেও বিনা তিল-১ চাষ করা যায়।

বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি বিনা তিল-১ চাষের জন্য উপযোগী। এই ফসল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তবে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে সকল প্রকার মাটিতেই জাতটি চাষ করা যেতে পারে ।

তিল কুয়াশা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না কিন্তু যথেষ্ট খরা সহিঞ্চু। যদি তাপমাত্রা ২৫-৩৫ সেলসিয়াসের নীচে নামে তাহলে বীজ গজাতে দেরী হয় এবং চারাগাছ ঠিকমত বাড়তে পারে না। বাড়ন- অবস্থায় অনবরত বৃষ্টিপাত হলে তিল গাছ মরে যায়। খরিপ মৌসুমে বীজ বপনের ৩৫-৩০ দিনের মধ্যে তিল গাছে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোটা শুরু হয়।

সাধারণত ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে এবং জমি সমান করে বিনা তিল-১ এর বীজ বপন করতে হয়। মুগসহ অন্যান্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করলে প্রধান ফসলের জন্য জমি তৈরি করতে হবে।

মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ (মধ্য ফাগুন) বিনা তিল-১ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। তবে উঁচু শ্রেণীর জমিতে ভাদ্র/আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়েও বিনা তিল-১ চাষ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রচণ্ড শীত শুরুর আগেই ফসল কর্তন করতে হবে।

ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৯ কেজি (একর প্রতি ৩-৩.৫ কেজি) এবং সারিতে বপন করার জন্য ৭ কেজি (একর প্রতি ২.৫-৩.০ কেজি) বীজ যথেষ্ট। তবে সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করার সময় উভয় ফসল কি হারে বা কত সারি পর পর কোন ফসলের বীজ বপন করা হবে, তার উপর নির্ভর করে বীজের হার নির্ধারণ করতে হবে।

জমিতে রস বেশি হলে অল্প গভীরে বীজ বপন করলে বীজ পচে না। মাটি শুষ্ক হলে বপনের পূর্বে একটি হলকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে।

বিনা তিল-১ এর বীজ ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা যেতে পারে। বীজ ও শুকনো বালু একত্রে মিশিয়ে ছিটিয়ে বপন করলে সমান দূরত্বে বীজ ফেলতে সুবিধে হয়। বিনা তিল-১ এর জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ সেন্টিমিটার দিতে হবে। বীজ বপনের ২ দিনের মধ্যে অংকুরোদগম ঘটে এবং ৩-৪ দিনের মধ্যে মাটির উপর উঠে আসে। জমিতে চারা যদি ঘন হয় তবে ১৫ দিনের মধ্যে গাছ তুলে পাতলা করে দিতে হবে।

বিনা তিল-১ চাষে সারের মাত্রা নির্ভর করে জমির ধরণ ও কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের উপর। সাধারনত বিনা তিল-১ চাষে একর প্রতি ইউরিয়া- ৪০-৫০ কেজি, টিএসপি- ৩৬-৪৮ কেজি, এমপি- ২০-৩০ কেজি, জিপসাম- ৫০-৬০ কেজি, জিংক সালফেট- ১-২ কেজি ও বোরন- ০.৪-০.৮ কেজি হারে প্রযোগ করতে হবে।

বোরন ঘাটতি এলাকায় হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি হারে বরিক এসিড প্রয়োগ করে অধিক ফলন পাওয়া যেতে পারে। জমি প্রস্তুতকালে অর্ধেক ইউরিয়া এবং পূর্ণ মাত্রায় অন্যান্য সার মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া সার বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

অধিক ফলন পেতে হলে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা অবস্থায় প্রায় ২০ দিন পর্যন- তিল গাছের বৃদ্ধি ধীর গতিতে হতে থাকে। এ সময় জমির আগাছা দ্রুত বেড়ে তিল গাছ ঢেকে ফেলতে পারে। তাই বীজ বপনের পূর্বেই জমিকে ভালভাবে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে সর্তকতার সাথে নিড়ানী দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে।

সাধারনত বিনা তিল-১ চাষাবাদে সেচের প্রয়োজন হবে না। বপনের সময় মাটিতে রসের অভাব থাকলে একটি হালকা সেচ দিয়ে বীজ গজানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় জমি শুষ্ক হলে একবার এবং ভীষণ খরা হলে ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরার সময় আর একবার সেচ দিতে হবে। তিল ফসল জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই জমির মধ্যে মাঝে মাঝে নালা কেটে বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে ফসলকে রক্ষা করতে হবে ।

রোগবালাই দমন : কাণ্ড পচা রোগ এবং বিছা পোকা ও হক মথ তিল ফসলের ক্ষতি করতে পারে। কাণ্ড পচা রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বাজারে যেসব ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়, যেমন রেভিস্টিন এক গ্রাম বা ডাইথেন এম-৪৫, ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পরপর তিনবার দুপুর ২-৩ টার সময় জমিতে ছিটিয়ে রোগটি দমন করা যেতে পারে। বিছাপোকা দমনের জন্য ডিম পাড়ার সাথে সাথে আক্রান- পাতা ছিঁড়ে কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে কার্যকরভাবে মেরে ফেলা যেতে পারে। সাইথ্রিন-১০ ইসি বা সবিক্রন-৪২৫ ইসি প্রয়োগ করে দমন করা যেতে পারে।

ফসল কাটা : বিনাতিল-১ পাকার সময় পাতা, কাণ্ড ও ফলের রঙ হলুদাভ হয় এবং বীজের খোসা ধূসর বর্ণ ধারণ করে। তিল ফসলের প্রতিটি গাছের সব বীজ এক সঙ্গে পাকে না। গাছের গোড়ার দিকের বীজ আগে পাকে এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকের বীজ পাকাতে শুরু করে ।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের বাস-ব উপায় হল, গাছের নীচের অংশের বীজ যখন পাকা শুরু করে তখন ফসল কেটে বাড়ির উঠানে কয়েকদিন স-ূপ করে রেখে দিলে উপরের দিকের বীজও পেকে যায়। তারপর তিল গাছ রৌদ্রে শুকিয়ে লাঠির সাহায্যে পিটিয়ে মাড়াই করতে হবে। এরপর বীজ ভালভাবে ৪-৫ দিন টানা রৌদ্রে ৩-৪ ঘন্টা করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

তিল ফসল কর্তনের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বিলম্বে ফসল কাটা হলে বীজ ক্ষেতে ঝরে পড়ে, আবার আগাম কাটা হলে অনেক বীজ অপরিপক্ক থেকে যায়, উভয় ক্ষেত্রেই ফলন হ্রাস পায়।

বীজ সংরক্ষণ : বীজের মান ভাল রাখার জন্য পরিষ্কার বীজ পুরু বা শক্ত পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ বেঁধে অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে কম আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণকালে বীজের আর্দ্রতা অবশ্যই শতকরা ৮ থেকে ৯ ভাগ হতে হবে। আরও ভাল হয় যদি ব্যভিস্টিন (প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে) দিয়ে বীজ শোধন করে সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে সংরক্ষিত বীজের মান ভাল থাকে এবং অংকুরোদগম ক্ষমতা সহজে নষ্ট হয় না।

লেখক: ড. নিয়াজ পাশা, কৃষি বিজ্ঞানী, বিনা, ময়মনসিংহ
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

পুষ্টি মেটাতে সয়াবিন চাষ

পুষ্টি মেটাতে সয়াবিন চাষ


দু'বেলা পেট ভরে খেতে পারে না বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ। সাধারণ মানুষ আয়ের সবটুকু খরচ করেও পেটের খাবার জোগান দিতে অক্ষম। পুষ্টিকর খাবার এদের কাছে স্বপ্নের মত। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে পারলে তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ফলে এ দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগই পুষ্টিহীনতার শিকার। শিশুদের বেলা এ তথ্য আরও ভয়াবহ।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, আমিষ, ক্যালোরি, খাদ্যপ্রাণ এবং খনিজ পদার্থের অভাবে আমাদের নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের শিকার হতে হয়। যেমন, দৈহিক গঠনে, বুদ্ধিতে, ক্ষয়পূরণে, শক্তি সঞ্চয়ে। সর্বোপরি বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার মানুষের জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে আমিষ জাতীয় খাবারের বাজার মূল্য অনেক বেশি। যা গরিব মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আবার প্রাণীজ আমিষের উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ আমিষের চেয়েও ব্যয়বহুল। এক সময় ডালের দাম ছিল কম। গরিব মানুষই ডাল খেত। এই জন্য ডালকে গরিবের মাংস বলা হত। কিন্তু এখন ডালের উচ্চমূল্যের কারণে গরিবরা ডাল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে অপুষ্টি। তারা নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের শিকার হচ্ছে। আমরা আমাদের এই পুষ্টির অভাব অনেকটাই মেটাতে পারি সয়াবিনের চাষ করে। সয়াবিন আমিষ এবং তেল সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফসল। সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ অন্য যেকোন খাদ্যশস্য থেকে বেশি থাকে। ডাল জাতীয় অন্যান্য ফসল থেকেও এর পুষ্টিমান দিগুণ এবং বাজারে সবচেয়ে সস্থা- খেশারী ডালের দামের অর্ধেক। তেল সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে সয়াবিন ক্যালোরি ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং পরিবেশ সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী। সয়াবিনের ভাজা ডাল এবং খিচুরী অত্যন্ত- পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও রুচিকর।

বাজারে সাধারণত যেসব ডাল পাওয়া যায়, তার চেয়ে সয়া ডালে আমিষের পরিমাণ অনেক বেশি। সয়াবিন ভাত বা রুটির সাথে খেলে প্রাণীজ আমিষের সমান পুষ্টি পাওয়া যায়। আমিষ, তেল/চর্বি, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ উপাদান কোনটিরই ঘাটতি নেই। স্বল্প খরচে সয়াবিন চাষ করা যায়। আবার বাজারে এর দামও কম। তাই আমাদের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে সয়াবিন খাবারের সাথে যোগ করতে পারি।

অধিকাংশ মানুষের ধারণা সয়াবিন থেকে শুধু তেল উৎপাদন হয়। কিন্তু না, সয়াবিন থেকে যেমন তেল হয়, তেমনি অন্যান্য জিনিসও উৎপাদন হয়। সয়াবিন থেকে পরোটা, মসলাযুক্ত সয়া বাদাম বা নাট, সয়া পেঁয়াজু, সিঙ্গারা, সয়াবিন ঘুগনি, সয়াবিন চটপটি, সয়া ময়দা, সয়া শিশু খাদ্য, সয়া ডাল, সয়া টক ডাল, সয়া হালুয়া, সয়া খিচুরী, সয়া পাতরা, সয়া ভর্তা, সয়াবিন মিশ্রিত মিষ্টি কুমড়ার তরকারি, সয়াবিন মিশ্রিত আলুর তরকারি, সয়াবিন মিশ্রিত শাক, সয়া দুধ, সয়া দধি, সয়া ভাঁপা পিঠা ইত্যাদি।

সয়াবিন চাষ ও জাত : বাংলাদেশে সব ধরনের মাটিতে সয়াবিন চাষ করা যায়। তবে পলি, দো-আঁশ মাটিতে সয়াবিন চাষ ভাল হয়। সয়াবিন চাষ গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালে করা যায়। যেমন, বাংলাদেশ চার (জি-২) : ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর, সোহাগ : ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারি এবং সোহাগ : ১৫ জুন থেকে ৩০ আগস্ট।

ফসলের সময় ও বীজ : বীজ বুনা থেকে ফসল কাটা পর্যন- ১০০ থেকে ১১৫ দিন সময় লাগে। চাষের জন্য লাগে একরপ্রতি ১২ থেকে ১৬ কেজি বীজ।

সার প্রয়োগ : ইউরিয়া ২০০ গ্রাম প্রতি শতাংশে। টি.এস.পি ৫০০ গ্রাম প্রতি শতাংশে। এম.পি ২৫০ গ্রাম প্রতি শতাংশে। জিপসাম ৪৫০ গ্রাম প্রতি শতাংশে।

পরিচর্যা : জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। রোদে জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে এবং পোকা-মাকড় দমনের জন্য স্থানীয় উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

সাধারণত রবি মৌসুমে সয়াবিনের ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়। এ সময় একরপ্রতি ২০/২৫ মণ ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য সময় ১৫/১৮ মণ ফলন হয়।

কম দামে অধিক পুষ্টি পেতে আমরা সয়াবিনের চাষ করতে পারি। অনেকটা মেটাতে পারি আমাদের দেশের পুষ্টির চাহিদা।

লেখক: মতিন সৈকত, কৃষক, কুমিল্ল্লা
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

গোলমরিচের চাষ পদ্ধতি

গোলমরিচের চাষ পদ্ধতি


গোলমরিচ একটি মসলা জাতিয় অর্থকরী ফসল। খাবারকে সুস্বাদু করতে এবং বিভিন্ন ভেষজ ওষুধের সাথে এর ব্যবহার দেখা যায় আমাদের দেশে।

সরকারের কৃষি বিভাগ গ্রামীণ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে উৎসাহ দিয়ে আসছে গোলমরিচ চাষে। যার ফলে গ্রামীণ কৃষি পরিকাঠামোর অবস্থান অনুযায়ী সচেতন শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত চাষিরা গোলমরিচ চাষে এগিয়ে আসছে। গ্রামীণ অর্থনৈতিক ভিত সুদৃঢ় ও কম সময়ে অধিক উপার্জন পেতে গোলমরিচ এক অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত। তাই গোলমরিচ চাষ করতে কৃষকের ক্ষেত প্রস্তুত, চারা উৎপাদন ও রোপণ প্রণালী, রোগ প্রতিরোধ, দ্রুত চারা উৎপাদন পদ্ধতি এবং ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলমরিচ চাষ নিয়ে এ প্রতিবেদন।
golmoris
গোলমরিচ লতাজাতিয় উদ্ভিদ। পান গাছ, ওদাল, বেত ইত্যাদির মত গোলমরিচ এক পরাশ্রয়ী গাছ। এজন্য গোলমরিচের অন্য গাছের আশ্রয় প্রয়োজন। আম, সুপারী, কাঁঠাল, মান্দার, তেঁতুল, নারিকেল, তাল, সিলভার, অক, টিক, খেজুর ইত্যাদি গাছ গোলমরিচের আশ্রয়ী হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া অমসৃণ ছাল থাকা গাছে গোলমরিচ গাছ ওঠার জন্য সুবিধা হয়।

গোলমরিচের চারা উৎপাদন পদ্ধতি :
সাধারণত গোলমরিচের চারা ডালের কলম থেকে তৈরি করা হয়। গোলমরিচের গাছের গোড়ার অংশকে 'রানার' বলা হয়। রানারের প্রতিটি গাঁট থেকে শিকড় বের হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে। রানারের প্রতি তিনটি গাঁটের একটি অংশ কেটে নিয়ে আশ্রয়ী গাছের কাছে 'সরা' লাগিয়ে দিতে হয়। মাটির সঙ্গে ৩ : ১ অনুপাতে দাগ দিয়ে একটি পালং তৈরি করে তাতে গোলমরিচের ডাল থেকে তিনটি গাঁটযুক্ত কলম কেটে লাগাতে হবে। এক থেকে দেড় মাস পর ওই কাটিং থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন পলিথিন ব্যাগে ৪ ইঞ্চি করে ৩ ভাগ দো- আঁশ মাটি ভর্তি করে ওই শিকড়যুক্ত কাটিং থেকে সাবধানে উঠিয়ে পলিথিন ব্যাগে রোপণ করে দিতে হবে। রোপণের পূর্বে বাঁশের কাঠি দিয়ে পলিথিন ব্যাগের মাটিতে গর্ত করে নিয়ে শিকড়যুক্ত কাটিং লাগাতে হবে। ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে একটি সুন্দর চারা গজাবে। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাস চারা উৎপাদনের পক্ষে উপযুক্ত সময়।

দ্রুত চারা উৎপাদন পদ্ধতি :
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোলমরিচের চারা উৎপাদনের জন্য দ্রুত চারা উৎপাদন পদ্ধতি কার্যকর। একটি গাছ থেকে বছরে অনত্দত ৩০ থেকে ৩৫ টি চারা উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য একটি ছায়াঘর তৈরি করতে হবে। প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ ধরনের শেডনেট ব্যবহার করে ছাউনিও তৈরি করা যায়। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বৃষ্টির পানি আটকানোর ক্ষমতা বিশিষ্ট এ নেটের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোদ প্রবেশ করতে পারে। ঘরের বাঁশের খুঁটির সারির উচ্চতা হতে হবে প্রতি ৩ মিটার এবং এবং দুপাশের খুঁটির উচ্চতা হবে ২ মিটার। ঘরের মধ্যে ১মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ৭৫ সেন্টি মিটার গভীর এবং ৩০ সেন্টি মিটার প্রস্থের নালা তৈরি করতে হবে। নালাগুলো বালিমাটি, কম্পোস্ট, কাঁঠালের গুঁড়ো এবং সারমিশ্রিত মাটি সমানভাগে মিশিয়ে ভর্তি করতে হবে। এখন ওই নালার এক ফুট অন-র অনত্দর ভাল জাতের সুস্থ চারা 'মাতৃগাছ' হিসেবে রোপণ করতে হবে। দুই নালার মধ্যবর্তর্ী জায়গার দুই মাথায় খুটি পুঁতে মাটির সঙ্গে আনুভূমিকভাবে একটি লম্বা বাঁশ বেঁধে দিন। এবারে একটি বেথু বাঁশের ১.২৫ মিটার লম্বা টুকরোকে দুভাগে ভাগ করে প্রতিটি মাতৃগাছের গোড়ায় বসিয়ে মাঝের বাঁধা আনুভূমিক বাঁশ হেলান দিয়ে রাখুন যাতে আধখানা বাঁশের টুকরো মাটির মাটির সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করে। এবারে আধখানা বাঁশের টুকরোতে বালু কাঠের গুঁড়ো, কম্পোস্ট ১:১:১ অনুপাতে ভালভাবে মিশিয়ে ভর্তি করুণ। গোলমরিচের প্রতিটি গাঁট মাটির সংস্পর্শে বেঁধে দিন, এর ফলে প্রতি গাঁট থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গোলমরিচের লতা আধখানা বাঁশের মাথা পেরিয়ে যাবে। এসময় লতার আগা কেটে নিন এবং গাছের গোড়ার তিনটি গাঁটের উপর লতা থেতলে দিন। তখন পাতার কোলে থাকা অঙ্কুর বাড়তে আরম্ভ করবে। ১০ দিন পর থেতলানো পাতার উপরের লতাটি কেটে ফেলুন। এরপর প্রতিটি শেকড় গাঁট থেকে আলাদা করে কেটে ফেলুন। ৪ ইঞ্চি পলিথিন ব্যাগে বালি-মাটি, কাঠের গুঁড়ো ও কম্পোস্ট সমানভাবে মিশিয়ে ওই একটি গাঁটযুক্ত কাটিং রোপণ করতে হবে। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিকড় নষ্ট না হয়। পলিথিন ব্যাগকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এবং দুতিন দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে। ৩ সপ্তাহের মধ্যে কাটিংয়ে নতুন পাতা গাঁট থেকে ছাড়তে আরম্ভ করবে। এভাবে অতি কম সময়ের মধ্যে গোলমরিচের চারা উৎপাদন সম্ভব।


বংশ বিস্তার :
গোলমরিচের বংশ বিস্তার পদ্ধতি খুবই সহজ। গোলমরিচের বীজ থেকে বংশ বৃদ্ধি করা যায়। এতে উৎপাদনে আসতে বেশি সময় লাগে। গোলমরিচের গুণাগুণ মাতৃগাছের মত না-ও হতে পারে। সেজন্য সাধারণত অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে গোলমরিচের বংশবৃদ্ধি করা হয়। সাধারণত এক মুকুল একপত্রীকাটিং -এ বংশবৃদ্ধি করা হয়। এ পদ্ধতি থেকে খুব সহজে গোলমরিচের চারা উৎপাদন করা যায়। শাখা রোপণে গাছ তৈরি হয় এবং গাছগুলো খুব সহজে বড় হয়।

আশ্রয় গাছ হিসেবে মান্দার গাছ গোলমরিচের জন্য ভাল। এ গাছটি সোজাভাবে বাড়ে এবং শাখা-প্রশাখার সংখ্যা কম থাকে। গাছের ছাল অমসৃণ এবং এ থেকে এক প্রকার আঁঠা জাতীয় পদার্থ বের হয়। মান্দার গাছের শাখাগুলো যখন গোলমরিচ গাছের উচ্চতা সীমিত রাখার জন্য কাটতে হয়, তখন কোন অনিষ্ট হয় না। মান্দার শুটি জাতীয় গাছ। ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন মাটিতে ধরে রাখতে পারে। এতে মাটি সমৃদ্ধ হয়।

চারা রোপণ পদ্ধতি :
গোলমরিচের চারা দুই প্রকারে রোপণ করা যায়। যদি বাগানে সুপারি, নারকেল, আম, মান্দার, কাঁঠাল ইত্যাদি আশ্রয় গাছ হিসেবে ব্যবহারের গাছ থাকে, তখন ওই গাছ থেকে দেড় হাত দূরে, দেড় হাত দৈর্ঘ্য, দেড় হাত প্রস্থ এবং দেড় হাত গভীর গর্ত করতে হয়। গোবর, পচনসার, বালিযুক্ত মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করে চারা রোপণ করতে হয়। গাছ উঠার সুবিধার জন্য বাঁশের অবলম্বন দেয়া প্রয়োজন।

নতুন জায়গায় গোলমরিচের চাষ করতে হলে প্রথমে আড়াই হাত থেকে চার হাত দূরত্বে এক হাত দৈর্ঘ্য এক হাত প্রস্থ এবং এক হাত গভীর গর্ত করে উপরে উল্লেখ করা মত গর্ত পূরণ করতে হয় এবং সেখানে আশ্রয় গাছের দক্ষিণ দিক ছেড়ে চারা লাগাতে পারেন ওই একই নিয়মে। প্রয়োজনে চারাগাছে ছায়া দেয়া উচিত।

সার প্রয়োগ :
প্রতি গাছে নিম্ন অনুমোদিত হারে সার প্রয়োগ করা উচিত। সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় চৈত্র-বৈশাখ মাস।

যত্ন :
গোলমরিচের লতাগুলো দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আশ্রয় গাছের সাথে বেঁধে দিতে হয়। গাছের গোড়া থেকে ৩ হাত উপর পর্যন- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। গোলমরিচ গাছ যাতে ৯ হাতের বেশি উঠতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

জলবায়ু :
গোলমরিচ চাষের জন্য উষ্ণ আদ্রতাযুক্ত জলবায়ু এবং সমানুপাতিকভাবে সমস- বছর বৃষ্টি থাকা বিশেষ প্রয়োজন। উল্লেখযোগ্য যে, গোলমরিচের পরাগ সংযোগ বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। গোলমরিচ চাষের জন্য বার্ষিক ২৫০০ মিঃ মিঃ বৃষ্টি এবং ১০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমান আবশ্যক। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি অথবা খরা পরিস্থিতি গোলমরিচ চাষের জন্য খারাপ।

মাটি :
অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে উচ্চ জৈব সার বিশিষ্ট পানি জমে না থাকা, পাহাড়ের লালমাটি গোলমরিচ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বন্যা কবলিত অঞ্চল ছাড়া বেলে দো-আঁশ মাটিতে গোল মরিচের চাষ করা যায়। আদ্রতাহীন মাটি গোলমরিচ চাষের জন্য অনুপযোগী।

জাত :
১ (হাইব্রিড), কারিমুণ্ডা, বালনকাট্টা, কল্লুভেল্লি, আরকুলপাম মুণ্ডা প্রভৃতি।

রোপণে সময় :
গোলমরিচ সাধারণত ভাল জাতের গাছ বা বীজ বৈশাখের ১০ থেকে ১৫ দিন থেকে আষাঢ়ের ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন- চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

রোগবালাই :
গোলমরিচে এক প্রকার ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। শ্রাবণ ও কার্তিক মাসে প্রতি ৫ লিটার পানিতে এক চা চামচ 'এন্দোসালফার ৩৫ ইসি' বা কুইনলফস বা ডাইমিথয়েট ৩০ ইসি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া ঝরে পড়া রোগের জন্য বর্ষাকাল আরম্ভ হওয়ার আগে বরডঙ্ মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হয়।

ফসল কাটা ও সংরক্ষণ :
গোলমরিচের ছড়িতে যখন দুএকটি গোলমরিচ হলুদ রঙের হয় তখন মই দিয়ে উপরে উঠে ফসল কেটে নিয়ে ছড়িগুলো মেলে রাখতে হয়। গোলমরিচগুলো পৃথক করে ৪-৫ দিন রোদে শুকাতে হয়। গোলমরিচ ভালভাবে শুকিয়ে গেলে কালো ও আকারে ছোট হয় এবং তারপর বাজারজাত করতে হয়।

ব্যবসা-অর্থনীতি :
গোলমরিচ রোপণের তিন বছর থেকে উৎপাদন শুরু হয়। যদিও ৭-৮ বছর থেকে পুরোপুরি উৎপাদন চলে আসে। প্রতি গাছ থেকে ৫-৬ কেজি কাঁচা গোলমরিচ উৎপাদন হয়। কাঁচা গোলমরিচ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ শুকনো গোলমরিচ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, একটি গাছ থেকে গড়ে দেড় থেকে দুই কেজি শুকনো গোলমরিচ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হলে একটি গোলমরিচের গাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন করা যায়। হিসেব অনুযায়ী একটি গাছের জন্য খরচ প্রায় ৩৫ টাকা। সুতরাং খরচের তুলনায় লাভ যথেষ্ট।
golmoris
সম্ভাবনাময় গোলমরিচ চাষে কৃষকরা আরও উদ্যোগী হবেন। প্রতি জেলাতে কৃষি বিভাগ গোলমরিচ চারা জোগান ও কৃষি বিভাগের খামারে গোলমরিচ চারা উৎপাদন করা হয়। এ ব্যাপারে সচেতন কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

লেখক: আফতাব চৌধুরী, সিলেট
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

বাউকুল চাষ

বাউকুল চাষ


সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাউকুল। এই বাউকুল চাষ করে যে কেউই সহজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এই মৌসুমী ফলের চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সফল বাউকুল চাষী নরসিংদীর এম এ কাউসার মিলন।

বাংলাদেশের আবহাওয়া কুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। জলা বদ্ধতাহীন যে কোন মাটিতে বাউকুল চাষ করা যায়। এই গাছের জীবনীশক্তি অনেক। অল্প পুঁজি, অল্প জমি এবং অল্প সময়ে বাউকুল চাষ করে সফলতা আনা সম্ভব।

বাউকুল চাষের মাধ্যমে এক বিঘা (ত্রিশ শতাংশ) জমি থেকে ছয় বছরে সম্ভাব্য নু্ন্যতম আয় ১৮-২০ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন সাথী ফসল তো আছেই। চারা লাগানোর প্রথম বছর ছাড়াও প্রতি বছর গাছ ছাঁটার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়। তখন মৌসুমী সবজি চাষ করে কুল বাগানের বাৎসরিক পরিচর্যা খরচ উঠিয়ে নেয়া সম্ভব। এই সময়টুকুতে বেগুন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়শ, অথবা হাইব্রিড ধনেপাতার চাষ করা যায় ।

ছয় বছরে আয়-ব্যয়ের হিসাবটুকু একটু মিলিয়ে নেয়া যাক। সে আলোকে নিম্নে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের ছক দেখানো হলো।

এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে প্রথম বছর চারার দরকার হয় ১৫০টি। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ছয় ফুট। তিন বছর পর দুটি গাছের মাঝ থেকে একটি গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং গাছের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টি। উপরোক্ত হিসেব অনুযায়ী ছয় বছরে এক বিঘা জমি থেকে নীট লাভ ১৭,৬২,০০০/- টাকা।

কোথায়, কখন কীভাবে চাষ করবেন:

আগেই বলা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র জলাবদ্ধতাহীন জমিতে বাউকুল চাষ করা যাবে। পাহাড়ের ঢালে, পুকুর পাড়ে, কিংবা বালুময় চরাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে এমনকি আপনার বাড়ির ছাদে টব কিংবা ড্রামে। মধ্য মে থেকে মধ্য আগষ্ট পর্যনত্দ কুলের চারা রোপনের উৎকৃষ্ট সময়। এছাড়াও পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই কুলের চারা রোপন করা যায়।

রোপন পদ্ধতি :

১. সাধারণ : সামপ্রতিক মাঠ গবেষণায় দেখা গেছে পাহাড়ের লাল মাটি, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙ্গিনা এবং অসমতল অনাবাদী জমি ব্যতীত অন্যান্য ফসলি জমি যেমন, এঁটেল, দো-আঁশ, পলি মাটিতে গর্ত করে মাদা তৈরি করার প্রয়োজন হয় না। এ ধরণের জমি তৈরিতে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৬০ কেজি টিএসপি, ৩০ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি এমওপি, ৬০ মণ পঁচা গোবর ও দুই কেজি পাউডার সোহাগা প্রয়োগ করে মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে এবং প্রতি ১২ ফুট অনত্দর ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ৬ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করে নালার মাটি উভয় পাশে ছিটিয়ে দিয়ে সমসত্দ জমিতে ১২ ফুট প্রস্থের বেড তৈরি করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর প্রতি বেডের মাঝখানে ৬ ফুট অনত্দর চারা রোপন করতে হবে।

২. মাদা তৈরি : সারি থেকে সারি ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ছয় ফুট দূরত্বে চারা রোপনের লক্ষ্যে আপনাকে উল্লেখিত দূরত্বে দুই ফুট দূরত্বে দুই ফুট দৈর্ঘ্য, দুই ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট গভীর গর্ত করতে হবে। গর্ত থেকে উত্তোলিত মাটির সাথে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল ও ১০ গ্রাম পাউডার সোহাগা এবং ১৫-২০ কেজি পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে গর্তের পাশে ঢিবি করে রেখে দিতে হবে এক সপ্তাহ। তারপর সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করার দুই সপ্তাহ পর কুলের চারাটি রোপন করে একটি কাঠি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। কলমকৃত অংশের নীচ থেকে গজানো ডাল বা কুশি সবসময় কেটে দিতে হবে। নতুবা জংলি গাছের প্রভাবে কলম চারাটি মারা যেতে পারে।

৩. ড্রামে বা টবে চাষ : এক্ষেত্রে সমপরিমাণ মাটি ও পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে ড্রাম বা টবটি ভরাট করে দুই সপ্তাহ রেখে দিয়ে চারা রোপন করতে হবে এবং ১৫ দিন চারটি সিলভামিক্স ট্যাবলেট গাছের তিন ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে হবে। এইভাবে ফুল আসার সময় আর একবার সিলভামিক্স ট্যাবলেট প্রয়োগ করতে হবে।

টব/ অর্ধড্রামে কুলের চাষঃ
ক. প্রথমে টবের তলায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া, পচাঁ পাতা এবং খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
খ. পুরো টব বা ড্রামটি সমপরিমান পচাঁ গোবর ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রন দিয়ে ভরে দিতে হবে।
গ. এবার টবের মাঝ খানে একটি সুস্থ্য ও সবল কলম রোপন করতে হবে। এ জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক সারের দরকার নাই।
ঘ. তবে গাছের কচি পাতা বের হয়ে তা পরিপক্ক হলে ২-৩ টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৫-৭ সে.মি. দুরে ৫-৭ সে.মি. মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে।
ঙ. গাছের প্রয়োজন অনুসারে সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভালভাবে যত্ন করলে এক বছরের বয়সী গাছ থেকে হেক্টর প্রতি ৮-১২ টন ফলন পাওয়া যায়।

উপরি প্রয়োগ :
বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা লাগানোর পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছে ফুল আসার আগে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও গাছের বৃদ্ধি কম হলে প্রথম প্রয়োগের ৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

প্রথম উপরি প্রয়োগ :
গাছ প্রতি ইউরিয়া ৫০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম এবং খৈল ৫০ গ্রাম একসাথে মিশিয়ে গাছের ছয় ইঞ্চি দূরত্বে রিং প্রয়োগ করে হালকা নিড়ানি দিয়ে মাঠের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছ প্রতি ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম এক সাথে মিশিয়ে গাছের ৬ ইঞ্চি দূরত্বে প্রয়োগে হালকা নিরানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

প্রতি বছর কুল ওঠানোর পর মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছগুলোর আকার অনুসারে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় মূল কাণ্ডটি রেখে সব ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং বাগানের মাটি হালকা করে কুপিয়ে প্রথমবার জমি তৈরির মত গোবর ও অন্যান্য সার পরিমাণ মত প্রয়োগ করে নালাসহ বেড তৈরি করে দিতে হবে।

রোগবালাই :
যথেষ্ট প্রতিকূলতা সহনশীল কুল গাছ সাধারণত বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়।

প্রতিকার :
বিছাপোকা ও অন্যান্য পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতি লিটার পানিতে দুই মি.লি. পাইরিফ্স জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। মাকড়শা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানিতে দুই টাফগড় সাথে দুই গ্রাম থেয়োভিট মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে প্রতি লিটারে এক মি.লি. হারে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সপ্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ হলে প্রতি লিটার পানিতে কার্বেনডাজম এবং দুই গ্রাম মেনকোজেব ভালভাবে মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ফুলে লিটুনেস বা এ্যাগনল এবং ভালমানের পিজিআর ব্যবহার করুন।

পরিশেষে পরিপক্ক ডাসা কুল সংগ্রহ করে টাটকা অবস্থায় বাজারজাত করুন।

ভাল জাতের বাউকুল চারার খোঁজ:
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
মিলন ফার্মিং কমপ্লেক্স, উত্তর শিলমান্দি, নরসিংদী।
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি, খামারবাড়ি, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২২৫।

তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

কাজী পেয়ারা চাষ

কাজী পেয়ারা চাষ


কেউ বলেন কাজী পেয়ারা আবার কেউ বলেন কেজি পেয়ার। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে কাজী পেয়ারা। পেয়ারটির আকার ক্ষেত্র বিশেষে এক কেজির কাছাকাছি বলে । কিন্তু না এটি 'কাজী পেয়ারা'। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে, নতুল জাতের উচ্চফলনশীল পেয়ারাটি এদেমের মাটিতে ফলানোর পেছনে এই কৃষি বিজ্ঞানীর ভূমিকা কি ছিল। অথচ কি দূর্ভাগ্য এ জাতির, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর উদ্ভাবনী চেতনার আজ আমা শস্যদানা গিলে বেঁচে আছি, তাঁদেরকেই আমরা চিনিনা। যেমন চিনিনা, কৃষিবিজ্ঞানী হাসানুজ্জামানকে।

কাজী পেয়ারা কথা বলছিলাম। নতুন জাতের এই পেয়ারটি এদেদেশের মাটিতে ফলানোর চেষ্টা শুরু হয় যদ্দুর মনে পড়ে '৮৩'র প্রথমভাগ থেকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেবু ও সব্জি বীজ গবেষণা কেন্দের বিজ্ঞানীদের প্রজেষ্টায় কলম থেকে এর বংশ বিস্তার শুরু হয়। স্বল্প সময়ে গাছে পলন আসে, আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু বলে উফসি জাতের এই পেয়ারা জনগণের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করে এবং কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের নার্সারির মাধ্যমে গোটা দেশে কাজী পেয়ারার চারা বিতরণ মপ্রসারিত হয়। পাশাপাশি নার্সারিগুলোও চারা উৎপাদন ও বিতরণের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
নরসিংদী আর কিশোরগঞ্জের ন্যায় সারা দেশের অনেক জেলাতেই এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কাজী পেয়ারার চাষ করছেন। বাংলাদেশে পেয়ারার জাতের মধ্যে কাঞ্চননগর ও স্বরুপকাঠী অন্যতম। বৃহত্তর বরিশালের স্বরুপকাঠি, বাসরী পাড়ার তাকলম ও মূলঘর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে স্বরূপকাঠী জাতের পেয়ারা বাগান। পেয়ারা, আমড়া ও নানার জাতের গাছের চারা উৎপাদন এ অঞ্চলের কৃষকের অন্যতম পেশা অথবাবলা চলে এগুলো তাদের অর্থকরী ফসল। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য এখানকার পেয়ারা বাগানগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছিল। দু'ধারে লম্বালম্বি নালা মাঝাখানে উঁচু ভিটা-এই ভিটায়ই পেয়ারা বাগান। এভাবে পর্যায়ক্রমে একটার পর একটা ভিটা তৈরি করা হয়েছে। এ অঞ্চলে পেয়ারার চাষের ইতিহাস কয়েক শ' বছরের হবে।

কাজী পেয়ারার কেন এত প্রস্রার ঘটালো? এর প্রধান কারণ হচ্ছে কাজী পেয়ারা খেতে বেশ মিষ্টি, কচকচে, সুস্বাদু, আকারে বড়, দেখতে সুন্দর। পাকা পেয়ারার রং হলদে সবুজ। ভিতরের শাস সাদা। বীচির সংখ্যা কম ও নরম। সর্বোপরি খদ্যেরপযোগী অংশের পরিমাণ যে কোন জাতের পেয়ারার চাইতে বেশী। দু'বছর বয়সের গাছ বছরে গড়ে ১২৮টির ও বেশী ফল দিয়ে থাকে যার গড় ওজন ৫৩ কেজির কিছু বেশী। প্রতি ফলের গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম এবং বড় আকারের ফল ৯৯০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের তৈরী কাজী পেয়ারা চাষ নির্দেশিকা থেকে এই তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হল-

মাটি
কাজী পেয়ারা চাষের জন্য হালকা বেলে থেকে ভারি এটেল মাটি উত্তম। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি দাঁড়িয়ে না তাকে, এমন জমি ভালো।

বংশ বিস্তার
বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা সবচেয়ে সহজ। কিন্তু বীজের গাছে মাতৃগাছের গুণ বজায় থাকে না এবং পল অনেক সময় নিকৃষ্ট মানের হয়। অন্যদিকে অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করলে সে গাছের পেয়ারা মাতৃগাছের পেয়ারা হতে পার্থক্য হয় না। তাই বীজ দিয়ে বংশ বিস্তার না করে কলমের দ্বারা বংশ বিস্তার করাই উত্তম। অযৌন পদ্ধতির মধ্যে গুটিকলম, পাশর্্ব জোড় কলম, বর্মচোখ কলম, শাখা কলম ও মুল কলম দ্বারা পেয়ারার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে বাংলাদেশে গুটি কলমই বহুল প্রচলিত।

গুটি কলম
গুটি কলম দ্বারা বংশ বিস্তার খুব সহজ। বর্ষাকাল আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুটি কলম করতে হয়। গুটি কলমের জন্য উন্নত জাতের সুস্থ সবল পেয়ারার গাছ বেছে নিতে হবে। গুটি বাঁধনের জন্য কাঠ পেন্সিলের মতো মোটা একটি ডাল বেছে নিয়ে ডালটির আগা হতে নিচের দিকে ৩০ হতে ৩৮ সেমি জায়গা ছেড়ে দিয়ে ৩.৮ হতে ৫.০ সে.মি. পরিমাণ স্থানের বাকল গোল করে কেটে খুব ভালো করে পরিস্কার করে তুলে ফেলতে হবে। এরপর ঐ স্থানে পচা গোবর মিশ্রিত কাদামাটি চারদিকে ১.৩ হতে ২.৫ সে.মি. পুরু কলে লাগিয়ে উলু খড় ছালার টুকরো অথবা প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে ভাল করে বেঁধে দিতে হবে। সময়মতো গুটি করলে এক হতে দেড় মাসের মধ্যে শিকড় বের হয়। শিকড় বের হবার পর যেখানে গুটি বাঁধা হয় তার নিচ দিয়ে ডালটিকে কেটে দিতে হয়। গুটির ডালটি একবারে না কেটে অন্তত তিন বারে একটু একটু করে কেটে নেয়া ভালো। গুটিটি আসল গাছ থেকে কেটে দেয়ার পর কয়েক দিনের জন্য ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রেখে দিতে হয়। এরপর গাছ থেকে কেটে কেটে গোবর ও মাটি মিশ্রিত মাটির পাত্রে লাগিয়ে কয়েক দিনের জন্য সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেয়া উচিত। মাঝে মাঝে পাত্রে পানি দিলে ও যত্ন নিলে কিছু দিনের মধ্যে গুটির গাছে নতুন পাতা ও শিকড় বের হবে।

চারা বা গুটি লাগানো
এক গাছ হতে অন্যগাছ কত দূরত্বে লাগাতে হবে তা জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে। এক বছর বয়সের চারা বা গুটি সাধারণত ৪/৬ মিটার দূরে দূরে লাগানো উচিত। মে থেকে জুলাই মাস পেয়ারার চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।

গর্ভতৈরি ও সার প্রয়োগ
চারা লাগাবার জন্য ৬০ সে.মি. প্রস্থ এবং ৪৫ সে.মি. গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে নিন্ম লিখিত সার প্রয়োগ করা উচিত।
১। পচা গোবার অথবা আর্জনা পচা সার ১০/১২ কেজি
২। সরিষার খৈল ১ থেকে ২ কেজি
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট ঙ্গ থেকে ১ কেজি

উপরোলি্লখিত সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ৮ হতে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। চারা লাগাবার পর চারাটিরকে একটি শুক্ত খুটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে যেন বাতাসে চারার কোনো ক্ষতি না হয়।
বিষয়টি বোঝার জন্য আরো পরিস্কার ভাবে বলছি।
দুপুরে সূর্য যখন খাড়া আমাদের মাথার উপরে থাকে গাছের সেই ছায়াটি মাটির যতটুকু জায়গা জুড়ে পড়বে ততটুকু জায়গার মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্যা
বাঁচার জন্য মানুষের যেমন খাদ্যের প্রয়োজন টিক তেমনি গাছেরও খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি , জুলাই ও অক্টোবর মাসে তিন কিস্তিতে গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যতদূর পর্যন্ত গাছের ডালপালা বিস্তার করে সে এলাকার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। নিন্মের ছবে বিভিন্ন বয়সের গাছের সারের পরিমাণ দেখানো হল-
বিভিন্ন বয়সের গাছের প্রতি বছর সারের পরিমাণ (গ্রাম)
সারের নাম ১-২ বছর বয়সের গাছ ৩-৫ বছর বয়সের গাছ
পঁচা গোবার ১০-২০ কেজি ২৫-৪০ কেজি
ইউরিয়া ১৫০-২০০ গ্রাম ২৫০-০০০ গ্রাম
টিএসপি ১৫০-২০০ গ্রাম ২৫০-৪০০ গ্রাম
মিউরেট অব পটাশ ১৫০-২০০ গ্রাম ২৫০-৪০০ গ্রাম



৬ বা ততোধিক বছর বয়সের গাছ

পঁচা গোবার ৬০ কেজি
ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম
টিএসপি ৫০০ গ্রাম
মিউরেট অব পটাশ ৫০০ গ্রাম



গাছের গোড়া থেকে মাঝে মাঝে আগাছা পরিস্কার করা এবং গোড়ার মাটি ভেঙ্গে দেয়া দরকার। খরার সময় পানির ব্যবস্থা এবং খড় বা কচুরিপানা দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ঢেকে দেয়া উচিত, যেন মাটিতে রস বেশী দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে এবং আগাছা জন্মাতে না পারে।

গাছটি সুন্দরভাবে জন্মাতে হলে ছোট অবস্থাতেই দৈহিক গঠন ও পরে অঙ্গ ছাঁটাই অত্যাবশ্যক। দৈহিক গঠন মজবুত করতে প্রথমে গাছটিকে সোজা বাড়তে দিতে হবে এবং মাটি থেকে ৬০ সে.মি. উঁচুতে কেটে একটি শক্ত কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। তারপর সেই কাটা অংশ থেকে নতুন শাখা বের হলে মাত্র তিনটি শাখা তিনদিকে বাছাই করা উচিত। পরের বছর আবার সেই তিনটি শাখা ৪৫ সে.মি দূরে কেটে দুটি প্রশাখাকে বাড়তে দিতে হবে। এভাবে প্রথম কয়েক বছর গাছটিকে কেটেছেঁটে সুন্দর আকার ধারণ করাতে হবে যাতে গাছ খুব সহজেই তার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। অন্যদিকে অঙ্গ ছাটাই বলতে মরা, রোগাক্রান্ত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করা বুঝায়। সাধারণত বয়স্ক গাছের ফল সংগ্রহের পর জুলাই/ আগষ্ট মাসে অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়।

রোগবালাই ও পোকামাকড়
কাজী পেয়ারার রোগবালাই নেই বললেই চলে। পোকামাকড়ের মধ্যে ফল ও কাণ্ড খননকারী পোকাই প্রধান। এ পোকা প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ সিস ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দমন করা যায়। এছাড়া পাখি ও বাদুর পেয়ারার যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। গাছে টিন পিটিয়ে এর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ
কাজী পেয়ারা বছরে তিনবার ফল দিয়ে থাকে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যথাক্রমে মার্চ, আগষ্ট ও অক্টোবর মাসে ফুর আসে এবং জুলাই, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারী/ মার্চ মাসে সেই ফল থাকে। প্রথম ও তৃতীয় বারের তুলনায় দ্বিতীয় বারের ফলের সংখ্যা খুবই কম। প্রথম ও তৃতীয় বারে ফল বেশী আসে এবং ফলের আকার ছোট হয়ে যায় বিধায় ফঠ ছোট থাকা অবস্থাতেই কেটে পাতলা করে দেয়া উচিত। প্রতি থোকায় একটার বেশী ফল রাখা কোনোক্রমেই উচিত নয়। কলমের চারা ১/২ বছর পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। পেয়ারা পাকার সময় হলে সবুজ রং বদলে গিয়ে আস্তে আস্তে হলদে বেশী পাকতে দেয়া উচিত নয়। কারণ বেশী পাকা পেয়ারা খেতে মোটেই সুস্বাদু নয় এবং বাজারজাতকরণে কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

সবুজ প্রকৃতিতে সবুজ বাড়ি, সবুজ প্রযুক্তি,green house

সবুজ প্রকৃতিতে সবুজ বাড়ি, সবুজ প্রযুক্তি
green house

যেন সূর্যের সঙ্গে বোঝাপড়া। শীতে উত্তাপ ছড়ালেও গ্রীষ্নে সূর্য তার তেজ নিয়ে পালিয়ে বেড়াবে এই বাড়ি থেকে। যে কারণে শীতে বাড়িটি উষ্ণ থাকলেও গ্রীষ্নে থাকবে শীতল। বাড়ির সব বাতি জ্বলবে সৌরশক্তিতে। বাড়িটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও থাকবে, কিন্তু সেটাও হবে পরিবেশবান্ধব। বাতাস থেকে নয়, ভূগর্ভস্থ তাপমাত্রা কাজে লাগাবে কৃত্রিমভাবে। পুরো বাড়ির নকশায় জ্যামিতিক যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সূর্যের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার জন্য। সেই সূর্যের তেজকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও পানি গরম করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়িটিতে। গাছগাছালি, তৈজসপত্র, বাড়ি তৈরির সরঞ্জামসহ এখানকার সবকিছু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন পরিবেশদূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। তাই বলে আভিজাত্যেও কোনো কমতি থাকছে না। পরিবেশের দোহাই দিয়ে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে না আপনাকে। শান্তিময় এই অত্যাধুনিক বাড়িটি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার ফারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৈরি করা বাড়িটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছে। ক্লিফস কটেজ নামের এই সবুজ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। তিন হাজার ৪০০ বর্গফুটের এই বাড়িটিতে আভিজাত্যের কোনো কমতি নেই। জীবনকে সহজ করতে পুরো বাড়িতে প্রচুর যান্ত্রিক বিন্যাস রয়েছে এখানে। কিন্তু এ জন্য যে বিদ্যুৎ খরচ হয় সেটা খুবই নগণ্য। কারণ বেশির ভাগ বিদ্যুৎই উৎপাদন করা হয় সূর্যের মতো প্রকৃতির আরও কিছু নিয়ামত কাজে লাগিয়ে। অত্যাধুনিক এই বাড়িটির ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচসহ মাসে মোট খরচ হয় ৭৫ ডলারের মতো, যা কিনা তিন কক্ষের একটি খুব সাধারণ বাসার চেয়েও কম। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লিফস কটেজের আদলে বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই বাড়িটির প্রতি আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র সরকারও। সে দেশের সাধারণ জনগণকে এমন বাড়ি তৈরিতে উৎসাহ জোগাচ্ছে তারা।
বাড়িটিতে জৌলুশের কোনো অভাব নেই। কিন্তু সেই জৌলুশ আনা হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি দিয়েই। এাখানকার মেঝেগুলো তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। বাঁশের ওপর কাঁচের টাইলস, সেই টাইলস পচনশীল এক ধরনের বিশেষ কাচে তৈরি। বাগান সাজানো হয়েছে সেখানে মানানসই স্থানীয় গাছ দিয়ে। এসব গাছে পানি দেওয়া হয় জমানো বৃষ্টির পানি থেকে। বাড়িটিতে ১২ হাজার গ্যালন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এই পানি পরিশোধন করে খাওয়া ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায়।
সূর্যের তাপ, তেজ ও দিক পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে পুরো বাড়িটির নকশা করা হয়েছে। ক্লিফস কটেজের ছাদটা অনেক অংশে ভাগ করা, অনেকটা বহুচালা ঘরের মতো। প্রতিটি চালা আবার একেক কোণে একেক দিকে মুখ করে আছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেবে এগুলো। শীতকালে সূর্য যেদিকে থাকবে, সেদিককার ছাদের বিন্যাস অনেকটা খোলামেলা, যাতে সূর্যের তাপ সরাসরি আসতে পারে। আবার গ্রীষ্নকালের তাপ ঠেকাতে ঘরের একদিকের ছাদ দিয়ে বেশ একটা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে বাতাসপ্রবাহের পরিকল্পিত ব্যবস্থা। ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য পুরো ঘরে বিশেষ ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এই পাথরগুলো তাপ শোষশ করে ঘরকে ঠান্ডা রাখে। সেই সঙ্গে আছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ এক ধরনের ভেষজ জেলি।
আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও। কিন্তু সেগুলো সাধারণ শীতাতপ যন্ত্র নয়। প্রযুক্তিও আলাদা। ভূগর্ভস্থ তাপমাত্রা ব্যবহার করে বিশেষ পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বসানো হয়েছে ক্লিফস কটেজে। এতে শীতাতপ ব্যবস্থার বিদ্যুৎ খরচ কমেছে অন্তত অর্ধেক।
ক্লিফস কটেজের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ আসে সৌরশক্তি থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও সৌরশক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে পানি গরম করার কাজে। ছাদে পানি গরম করার এই ব্যবস্থা থেকেই গৃহস্থালির কাজের প্রায় সব গরম পানি পাওয়া যায়। এখানকার সৌর উৎপাদনব্যবস্থা পুরোপুরি কম্পিউটারচালিত। বিভিন্ন সংগ্রাহক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কম্পিউটারের নির্দেশে সৌরবিদ্যুতের গ্রাহক অংশগুলো স্থান ও দিক পরিবর্তন করে। বাড়িটিতে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এ থেকে প্রায় ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় না ক্লিফস কটেজের জন্য। বাড়তি বিদ্যুৎ স্থানীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ক্লিফস কটেজ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উপযোগী এবং প্রশংসিত সবুজ বাড়ির মধ্যে একটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশদূষণ কমাতে সারা বিশ্ব এখন সোচ্চার। এ ধরনের সবুজ বাড়ি নিশ্চয়ই আশার আলো বিশ্ববাসীর কাছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

বাড়ির ছাদে বা বাগানে আঙ্গুর চাষ

বাড়ির ছাদে বা বাগানে আঙ্গুর চাষ
grape


বাংলাদেশে আঙ্গুর চাষের সম্ভাবনা
প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক। আর এ কথাটি আমাদের জন্য বেশ কার্যকর এ কারণে যে এই ফলটি আমরা এদ্দিন ফলাতে পরিনি। পুরোটাই আমদানী করে যেতে হয়। উচ্চমূল্যের কারণে বরাবরই সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বইরে থাকে। কখনও কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কালেভ্রদ্রে সাধারণ পরিবারে আঙ্গুর খাওয়া হয়। কিন্তু আমদের মাটি ও জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী, এটা সমপ্রতি প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দু'চারটি আঙ্গুর গাছ থাকলেও সেটা পরিবারের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ প্রতিষ্ঠানিক ভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯০ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ বিএডিসি'র উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে।

আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন
দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

জমি তৈরি কিভাবে করবেন
ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন তারপর ৭০ × ৭০ × ৭০ সে. মি. মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখো দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগ্রহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।

কখন সার প্রয়োগ করবেন
আঙ্গুর যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না হলে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩ বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গাছ বেড়ে ওঠার জন্য গাছের গোড়ায় শক্ত কাঠি দিতে হবে এবং মাচার ব্যবস্থা করতে হবে- সে মাচাতে আঙ্গুরের শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।

গাছের কান্ড ছাঁটাই
রোপনের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই করতে হবে। অধিকাংশ খামারিরই প্রশ্ন গাছে ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। এর কারণ কি? কান্ড ছাঁটাই -এর মাধমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ রোপনের পর মাচার ওঠা পর্যন্ত প্রধান কান্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্বের শাখা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।


প্রথম ছাঁটাই
মাচায় কান্ড ওঠার ৩৫/৪৫ সে.মি. পর প্রধান কান্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে ঐ কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে চারটি শাখা গজায়।

দ্বিতীয় ছাঁটাই
গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫-২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন ৪টি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যেখানে থেকে আরও পূর্বের ন্যায় দুটি করে ১৬টি প্রশাখা গজাবে।

তৃতীয় ছাঁটাই
এই ১৬টি প্রশাখা ১৫/২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখরে দুদিকে দুটি করে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা গজাবে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই যে ৬৪টি শাখা গজাবে এমন কোনো কথা নেই। এই শাখার গিরার মধ্যেই প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুলমটর দানার মত আকার ধারণ করে আঙ্গুল ফরে রূপান্তরিত হবে। প্রথম বছর ফল পাবার পর শাখাগুলোকে ১৫/২০ সে.মি. লম্বা রেখে ফেব্রুয়ারী মাসে ছেঁটে দিতে হবে ফলে বসন্তের পক্কালে নতুন নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩/৪ বছর পর্যন্ত চলবে এবং ফলের স্থিতি লাভ করবে।

পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ না হলেও ৩০ বছর ফলন দিতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রতি একরে ৪৩৬টি আঙ্গুর গাছে লাগানো যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতি গাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসাবে মোট ১৭৪৪ কেজি আঙ্গুর এক একরে উৎপাদন করা সম্ভব।

একটি হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষকের বসত ভিটার ৯ বর্গমিটার জায়গায় ৪টি গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি ফলনের মাধ্যমে ১৬ কেজি আঙ্গুর উৎপাদন করা সম্ভব। লাউ, সীম, কুমড়া এখন বসত ভিটার আঙ্গিনা থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাঠ পর্যায়ে চাষ হচ্ছে, অতএব বসত ভিটার ঐ মাচাটি এখন চাইলে আমরা আঙ্গুর মাচায় রূপান্তরিত করতে পারি। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, চারা উৎপাদন, বিতরণ এবং জোর প্রচারণা।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

স্ট্রবেরীর চাষ

স্ট্রবেরীর চাষ


সূচনা কথা
স্ট্রবেরী একটি অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু ফল। স্ট্রবেরী গাছ দেখতে অনেকটা থানকুনি অথবা আলুর গাছের মত, তবে পাতা আরো বড় এবং চওড়া। এটি থানকুনি গাছের মতই রানারের মাধ্যমে চারা চারদিকে ছড়াতে থাকে। পাশ থেকে বের হওয়া পরিণত রানার কেটে আলাদা লাগিয়ে এর চাষ করা সম্ভব। তবে এর বীজ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। একটি স্ট্রবেরী গাছ থেকে রানারের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করলে বছরে কয়েকশত চারা উৎপাদন করা সম্ভব। স্ট্রবেরী শীত প্রধান দেশের ফল তাই বেশি তাপমাত্রার কারণে বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ গাছ বাঁচিয়ে রাখা খুব কষ্টসাধ্য। স্ট্রবেরী ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় টকটকে লাল রঙের হয়। ফলটি দেখতে অনেকটা লিচুর মত। স্ট্রবেরী জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুয়েরসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল। এদের মধ্যে এলাজিক এসিড ক্যান্সার, বার্ধক্য, যৌনরোগ প্রতিরোধের গুণাগুণ আছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন ১৯৯৬ সালে জাপান থেকে একটি স্বল্প দিবা দৈর্ঘ্য জাতের স্ট্রবেরী বাংলাদেশে আবাদের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে দেখতে পান যে, এই জাতটি রানারের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। এমনকি ফলের আকার অনেক ছোট হচ্ছে। যা বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগী নয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত টিস্যু কালচার ল্যাবে গত কয়েক বছর গবেষণার মাধ্যমে একটি জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হন। যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব। তার জাতটির নাম এস.টি -৩। এটি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে মাঠে লাগালে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফলন দেবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান প্রতি গাছ থেকে উক্ত চার মাসে ২৫০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি স্ট্রবেরী গড় ওজন ১০ থেকে ১৫ গ্রাম। অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন গত ৩ বছর ধরে রাজশাহী মহানগীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ভদ্রায় আকাফুজি নার্সারীতে এটি সফলভাবে চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি বাংলাদেশ স্ট্রবেরী এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করছেন। অধ্যাপক মনজুর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সব এলাকার সব মাটিতেই স্ট্রবেরী চাষ সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সর্বোত্তম। উজ্জ্বল সূর্যালোকিত খোলামেলা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটির অম্লতা বা ক্ষারতা হতে হবে ৬.০ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে। এজন্য স্ট্রবেরী চাষের আগে মাটির অম্লতা বা ক্ষারতা এবং পুষ্টিমাত্রা পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। উঁচু মান ও ফলন পাওয়ার জন্য দিনের তাপমাত্রা ২০-২৬ক্ক সে. এবং রাতের তাপমাত্রা ১২-১৬ক্ক সে. হলে ভাল হয়। দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা সূর্যালোকের উপস্থিতি স্ট্রবেরীর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভাল। দিনের দৈর্ঘ্য ১৪ ঘন্টার কম হলে স্ট্রবেরীর ফুল আসতে শুরু করে। তাপমাত্রা ৩৮ক্ক সে. এর বেশি হলে স্ট্রবেরীর গাছ মারা যায়।

এক প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে যে ১ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করলে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা এবং ছয় মাসে আয় হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১ বিঘা জমিতে প্রয়োজনীয় ৬ হাজার চারার মূল্য ধরা হয়েছে ১লাখ ২০হাজার টাকা এবং উৎপাদিত দেড় হাজার কেজি স্ট্রবেরীর প্রতি কেজির মূল্য ধরা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা স্ট্রবেরী পাওয়া যায় বর্তমানে যার প্রতি কেজির মূল্য ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।
strawberry
স্ট্রবেরি চাষের এলাকা:
শীতের দেশে স্ট্রবেরি ভালো হয়। গরমের দেশে গাছ হয় কিন' সহজে ফল হতে চায় না। কিন' গবেষকদের প্রচেষ্টায় এদেশে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জাতের চাষ হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় স্ট্রবেরি ফলানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে যেসব জেলায় শীত বেশি পড়ে ও বেশিদিন থাকে সেসব এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা যেতে পারে। পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এমনকি পাবনা, নাটোরেও চাষ করা যায়।

উপযুক্ত মাটি:
বেলে দোঁআশ ও মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। যেসব জমিতে পানি জমে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যাবে না।

চারা তৈরি:
স্ট্রবেরির চারা এখনও তেমন সহজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কাঙ্ক্ষিত চারা অবশ্যই বিশ্বস- কোনো নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা দরকার। স্ট্রবেরি গাছগুলো গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ বলে গাছের গোড়া থেকে বেশ কিছু লম্বা লম্বা লতা মাটির উপর দিয়ে লতিয়ে যায়। মাটির সংস্পর্শে লতার গিট থেকে শিকড় গজায়। শিকড়যুক্ত গিট কেটে নিয়ে মাটিতে পুতে দিলে নতুন চারা তৈরি হবে। অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর সার মিশিয়ে পলিব্যাগে ভরে একটি করে শিকড়যুক্ত গিটসহ লতা পুঁতে দিতে হয়। এক্ষেত্রে একটি গাছ থেকে ১৮-২০ টি চারা তৈরি করা সম্ভব।

জমি তৈরি:
জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন-ত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। যেহেতু স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপর দিকে থাকে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে নির্ধারিত মাত্রায় সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
strawberry
চারা রোপণ:
স্ট্রবেরির চারা মধ্যঅক্টোবর থেকে মধ্যডিসেম্বর পর্যন- রোপণ করা যায়। তবে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য সবচে ভাল। জমি তৈরির পর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিতে হবে না হলে গাছ পঁচে যাবে।

সার প্রয়োগ ও সেচ:
স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।
strawberry
অন্যান্য যত্ন:
স্ট্রবেরি গাছে ফুল ধরাতে চাইলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো জমি ঢেকে ফেলে। এতে ফলন ভাল হয় না। এসব লতা যাতে কম বের হয় সেজন্য গাছের গোড়ায় খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিন সিট ৩০ সেন্টিমিটার পর গোলাকার ছিদ্র করে স্ট্রবেরি গাছের ঝোপকে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিতে হয়। বেশি ফলন ও তাড়াতাড়ি ফল পেতে হরমোন গাছ পাতায় সেপ্র করা যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ ও বিক্রি:
কাঁচা ফল যখন হলদে বা লালচে রঙের হতে শুরু করে তখন বুঝা যাবে ফল পাকা শুরু হয়েছে। ফল পুরো পাকলে লাল হয়ে যায়। তবে বিক্রির জন্য ফল পুরো লাল হওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস'ায় তুলতে হবে। আর ফল তুলতে হবে বোটা সমেত। পরে কাগজের প্যাকেটে করে বাজারজাত করতে হবে। ফল তোলার পর ১০-১২ দিন পর্যন- ভালো থাকে। গড়ে প্রতি গাছে ১৫০-২০০ গ্রাম ফল ধরে। ফলটি এদেশে নতুন তাই ঝুঁকিও বেশি। তবুও মেধা ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি চাষ একদিন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে সে কথা বলা যায়।
strawberry
স্ট্রবেরি চাষের এলাকা:
শীতের দেশে স্ট্রবেরি ভালো হয়। গরমের দেশে গাছ হয় কিন্তু সহজে ফল হতে চায় না। কিন্তু গবেষকদের প্রচেষ্টায় এদেশে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জাতের চাষ হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় স্ট্রবেরি ফলানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে যেসব জেলায় শীত বেশি পড়ে ও বেশিদিন থাকে সেসব এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা যেতে পারে। পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এমনকি পাবনা, নাটোরেও চাষ করা যায়।


উপযুক্ত মাটি:
বেলে দোঁআশ ও মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। যেসব জমিতে পানি জমে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যাবে না।

চারা তৈরি:
স্ট্রবেরির চারা এখনও তেমন সহজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কাঙ্ক্ষিত চারা অবশ্যই বিশ্বস- কোনো নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা দরকার। স্ট্রবেরি গাছগুলো গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ বলে গাছের গোড়া থেকে বেশ কিছু লম্বা লম্বা লতা মাটির উপর দিয়ে লতিয়ে যায়। মাটির সংস্পর্শে লতার গিট থেকে শিকড় গজায়। শিকড়যুক্ত গিট কেটে নিয়ে মাটিতে পুতে দিলে নতুন চারা তৈরি হবে। অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর সার মিশিয়ে পলিব্যাগে ভরে একটি করে শিকড়যুক্ত গিটসহ লতা পুঁতে দিতে হয়। এক্ষেত্রে একটি গাছ থেকে ১৮-২০ টি চারা তৈরি করা সম্ভব।

জমি তৈরি:
জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন-ত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। যেহেতু স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপর দিকে থাকে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে নির্ধারিত মাত্রায় সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দতিে হবে।

চারা রোপণ:
স্ট্রবেরির চারা মধ্যঅক্টোবর থেকে মধ্যডিসেম্বর পর্যন- রোপণ করা যায়। তবে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য সবচে ভাল। জমি তৈরির পর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিতে হবে না হলে গাছ পঁচে যাবে।


সার প্রয়োগ ও সেচ:
স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।
স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।

অন্যান্য যত্ন:
স্ট্রবেরি গাছে ফুল ধরাতে চাইলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো জমি ঢেকে ফেলে। এতে ফলন ভাল হয় না। এসব লতা যাতে কম বের হয় সেজন্য গাছের গোড়ায় খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিন সিট ৩০ সেন্টিমিটার পর গোলাকার ছিদ্র করে স্ট্রবেরি গাছের ঝোপকে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিতে হয়। বেশি ফলন ও তাড়াতাড়ি ফল পেতে হরমোন গাছ পাতায় সেপ্র করা যেতে পারে।
strawberry

ফল সংগ্রহ ও বিক্রি:
কাঁচা ফল যখন হলদে বা লালচে রঙের হতে শুরু করে তখন বুঝা যাবে ফল পাকা শুরু হয়েছে। ফল পুরো পাকলে লাল হয়ে যায়। তবে বিক্রির জন্য ফল পুরো লাল হওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস্থায় তুলতে হবে। আর ফল তুলতে হবে বোটা সমেত। পরে কাগজের প্যাকেটে করে বাজারজাত করতে হবে। ফল তোলার পর ১০-১২ দিন পর্যন- ভালো থাকে। গড়ে প্রতি গাছে ১৫০-২০০ গ্রাম ফল ধরে। ফলটি এদেশে নতুন তাই ঝুঁকিও বেশি। তবুও মেধা ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি চাষ একদিন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে সে কথা বলা যায়।
তথ্য সূত্র: কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহীত