পরিবেশে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের উপাদানের সমাহার। এই বিদ্যমান সুনিবিড় সুশৃঙ্খল বন্ধন কোননা কোনভাবে ছিন্ন হলে শুরু হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ফলে মানুষের জীবন হয়ে পড়ে সমস্যাসংকুল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের দূষণ শুরু হয়েছে, নদী দূষণ, লাগামহীন বর্জ্য উৎপাদন, অপ্রতুল ব্যবস্থাপনা, বনাঞ্চল নিধন প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানীরা পৃথিবীব্যাপি এ পরিবেশ বিপর্যয়ের মূলে বৈশ্বিক উষ্ণতা অর্থাৎ জলবায়ুর পরিবর্তনকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বিজ্ঞানীরা যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর উপকুলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখিন হবে, বঙ্গোপসাগরের মুখে অবস্থিত বাংলাদেশের ওপর আঘাতটা সবচেয়ে কঠিন হবে; তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঘটতে শুরু করেছে। উপকুলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা ও উষ্ণতা বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে খরা, আবার অন্য অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাতসহ বন্যা, সাইক্লোন ও হারিকেনের মত বিধবংসী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তান্ডব এ দেশের মানুষ, বিশেষ উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে বিভীষিকা সৃষ্টি করে চলেছে। এর স্বাক্ষর গত বছর পর পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘুর্ণিঝড়- সিডর, আইলা। যার দুর্ভোগ এখন দীর্ঘসময় পর্যন্ত মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। আইলার তান্ডবে দক্ষিণাঞ্চলের বেড়িবাঁধ, কাঁচারাস্তা, ঘরবাড়ি, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঐ অঞ্চলের জেলেদের জীবিকার একমাত্র উৎস জাল-নৌকা আর কৃষকের হালের গরু-লাঙ্গল সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, কেড়ে নিয়েছে সন্তান, পরিবারের সদস্যদের। চর এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে গ্রামগুলিতে স্থায়ী হয়ে যায় দীর্ঘদিন। এইসব এলাকার বাসিন্দারা যেখানে সাইক্লোন সেন্টার আছে সেখানেই গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছিল আর অনেককে থাকতে হয়েছে খোলা আকাশের নীচে। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রানের খাদ্য ও অন্যান্য সব কিছু ছিল অপ্রতুল; সবচেয়ে দুর্ভোগ হয় খাবার পানির। সকল গভীর ও অগভীর নলকুপ পানির নীচে। এখানকার মানুষজন নদী আর খালের পানি পান করে জীবন যাপন করেছে। এখানকার কিছু এলাকায় বিভিন্ন সংস্থা থেকে যেসব ঘরবাড়ি পাকা নির্মাণ করে দিয়েছিল আইলার বাঁধ ভাঙ্গা পানি এস তা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আইলার আঘাত ও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে শত শত চিংড়ি ঘের, ফলে ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এর জের ধরেই পটুয়াখালির প্রায় ১৩ লাখ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবার অনাবাদি থাকার আশংকা করা হচ্ছে লবণাক্ততা ও জমে থাকা পানির কারণে।
আইলাদুর্গত হাজার হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত তাদের বসতভিটায় ফিরতে পারছে না বাঁধ ভাঙ্গা পানির স্থায়ীত্বের কারণে। তারা বসবাস করছে ওয়াবদা রাস্তার উপরে, খোলা আকাশের নীচে। তাদের কর্মসংস্থান নেই, নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রানের উপর কিন্তু জুলাই মাসের পর থেকে সরকারীভাবে ত্রানও বন্ধ, মাথা গোঁজার ঠাই নেই স্যানিটেশনের কোন ব্যবস্থা নেই ফলে পরিবেশ আরো বিপর্যয় আর বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিপর্যস্ত অনেক পরিবার বাঁচার আশায় শহরে এসে বস্তিতে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। কৃষক শহরে এসে রিকশা কিংবা ঠেলাগাড়ি কিংবা নিম্নমানের কাজ করে জীবন চালাচ্ছেন। পরিবারের মেয়েরা করছেন ঝি কিংবা শ্রমিক হিসেবে অন্যান্য কাজ। শহরে বসবাসকারী লোকসংখ্যার চাপ বাড়ছে দিন দিন। ঐতিহ্যবাহী জীবন-যাপন আর মানুষের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন