ল্যাপটপে কৃষকের মুখ : কৃষিতে পরিবর্তনের স্পন্দন
মোহাম্মদ আবুল কালাম
বাংলাদেশের কৃষক লাঙল আর পাওয়ারটিলার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার চালাতে পারে, যা আজ আনন্দের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ও তার সহযোগীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এক ধাপ অগ্রগতি। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে ৩ দিনের আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় প্রধানমন্ত্রী কৃষি তথ্য সার্ভিসের স্টল পরিদর্শনে এসে কৃষকদের দ্বারা চালিত ল্যাপটপ ও ওয়েভ ক্যামেরার আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বললেন সৈয়দপুর, নীলফামারীতে নিয়ামতপুর এনসিডিপি ক্লাবে কৃষিতথ্য সার্ভিসের উদ্যোগে স্থাপিত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ সেন্টারে (এআইসিসি)। ওই সেন্টারে প্রশিক্ষণ পাওয়া কৃষক তখন ল্যাপটপ আর ওয়েভ ক্যামেরা নিয়ে বসে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কৃষককে টিভি মনিটরে দেখলেন এবং কৃষকও প্রধানমন্ত্রীকে তার ল্যাপটপে দেখে অভিভূত হয়ে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ কিছু পরামর্শ দিলেন। বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য এক নবযুগের সূচনার সৃষ্টি হল। সারাদেশে এ ধরনের পরীক্ষামূলক ২০টি এআইসিসি সেন্টার বা রেজিস্টার্ড কৃষক ক্লাব গঠন করে তাদের এআইএস সদর দফতর খামারবাড়ি ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণসহ ল্যাপটপ/ কম্পিউটার, ওয়েব ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার, ডানিডা ও ইউএনডিপির অর্থায়নে এবং এআইএসের প্রত্যক্ষ কারিগরি বিষয়ক তত্ত্বাবধানে ২০টি সেন্টারে উপকরণ সরবরাহের পর কৃষক সদস্যরা নিজেদের দেয়া মাসিক চাঁদায় ক্লাব পরিচালনাসহ কৃষকদের প্রয়োজনে সারের মাত্রা নির্ধারণ, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে পরামর্শ প্রদানসহ বিশেষ কোনও জটিল প্রশ্ন সমাধানে খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) সদর দফতরে স্থাপিত ওয়েব সেন্টারের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে উত্তর জেনে নিতে পারছেন। শুধু তাই নয়, কৃষক ল্যাপটপ/কম্পিউটারের বাটন টিপে কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট িি.িধরং.মড়া.নফ-এ বিচরণ করে গত ৫ বছরসহ বর্তমান সময়ের সব প্রচারণা বিশেষ করে প্রচারিত ম্যাগাজিন মাসিক কৃষি কথা, মাসিক সম্প্রসারণ বার্তা, পোস্টার, বুকলেট, ফোল্ডারসহ বিভিন্ন তথ্য ভাণ্ডারসমৃদ্ধ নানাবিধ প্রচারণা দেখতে পারেন। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় এআইএসের স্টলে এসে আরও বিশেষ ব্যক্তিত্ব যারা ভিডিও কনফারেন্সে ২০টি এআইসিসি সেন্টারের কয়েকটিতে সরাসরি কথা বললেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আইটি বিশেষজ্ঞ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. এসএ সামাদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিনিয়োগ বোর্ড, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমদসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং আরও অনেকে। এছাড়া প্রচার মিডিয়ার টিভি ব্যক্তিত্ব মুন্নি সাহা, মোজাম্মেল হক বাবু এবং চিত্রনায়ক রিয়াজ ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে অভিভূত হন। স্টলে রক্ষিত পরিদর্শন রেজিস্টারে তাদের মধ্যে অনেকেই মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ লিখে সবাই এআইসিসি সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ এটি একটি অনন্য সাধারণ উদ্যোগ বলে প্রশংসা করেন। যার ফলে দর্শকদের ভোটে ‘কৃষিতথ্য সার্ভিস’ (এআইএস) স্টল বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়ে আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার পক্ষ হতে প্রথম পুরস্কার পায়। মেলা শেষে এআইএস স্টলে ডিউটিরত এবং এআইএস হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র হতে আগত কৃষক প্রতিনিধি মো. মুসলেহ উদ্দিন, সভাপতি, চাষী ভাই আইপিএম ক্লাব (এআইসিসি), আখাউড়া, সিলেট সদর এবং জাহানারা বেগম, সদস্য, আখাউড়া ক্লাব, সাজ্জাদ হোসেন, নিয়ামতপুর এনসিডিপি ক্লাব (এআইসিসি), সৈয়দপুর, নীলফামারী ও মাসুদুর রহমান, সভাপতি, পূর্বদেবু (মধ্যপাড়া) আইপিএম ক্লাব, পীরগাছা, রংপুরের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারা সবাই পেশায় কৃষক। কৃষি তথ্য সার্ভিসের এআইসিসি সেন্টারে যোগ দেয়ায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে ইন্টারনেট-ওয়েবসাইট বিচরণসহ কৃষকদের প্রয়োজনে সার সুপারিশ প্রদান, বালাই দমনে পরামর্শ, ভিডিও কনফারেন্স, আইভিআর, এমএমএস, এসএমএসসহ ঢাকা এআইএস সদর দফতর খামারবাড়িতে যোগাযোগের পরামর্শ ও বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নিয়ে তা সাধারণ কৃষকদের সেবা প্রদান করতে পারেন। তারা প্রত্যেকে লাঙল, পাওয়ারটিলার সেচযন্ত্র চালানোসহ কৃষিকাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেরা উপকৃত হয়ে অন্যদেরকেও পরামর্শ দিতে পারেন। এতে তাদের সংসারেও স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে।
লেখক : কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবুল কালাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন