শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের কৃষি খাতের নিম্নলিখিত সম্ভাবনা ও সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করেছে।

সম্ভাবনাসমূহ
* মোট জাতীয় উৎপাদনে একক বৃহত্তম খাত হিসেবে কৃষিই সর্বাধিক অবদান রাখছে
* শস্য উৎপাদন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে শ্রমঘন এবং কৃষি খাতে বিদ্যমান উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি
* দক্ষ ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান কৃষি খাতই বৃহত্তম উৎস
* বছরব্যাপী বিদ্যমান অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ
* জৈব বৈচিত্র্যের ব্যাপক সমাহার
* বিভিন্ন প্রজাতির শস্য এবং কৃষিজ উৎপন্ন হলো আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের প্রধান উৎস
* কৃষিজাত উৎপন্নের ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎপাদনের চেয়ে অধিকতর মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে

সমস্যাসমূহ
* কৃষি ব্যবস্থা প্রকৃতির খেয়াল খুশির ওপর নির্ভরশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ
* আবাদযোগ্য ভূমির লভ্যতা ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে
* কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক দারিদ্র্য
* কৃষি কাজের অন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব
* কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতা
* অনুন্নত ও দুর্বল বাজার ব্যবস্থার কারণে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা
* কৃষিজ উৎপন্নসমূহ দ্রুত পচনশীল এবং ফসল-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অত্যধিক
* ফল এবং শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপন্নের পুষ্টিমান সমন্ধে সাধারণ মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান

বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি নিশ্চিতকল্পে উল্লিখিত সমস্যা ও সম্ভাবনাসমূহকে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো আর সমস্যাকে মোকাবিলা করা এ দুই-ই হলো উন্নয়নকে গতিশীলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান শর্ত। আমাদের অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা সাপেক্ষে, সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলোর যথার্থ বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে হবে যে, কোন সম্ভাবনাকে আমরা এখন কাজে লাগাব এবং কোন সমস্যাটিকে বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ শুরু করব। জনতার সর্বোচ্চ উপকারের নিশ্চয়তা বিধানের প্রত্যয় এবং বিবেচনা থেকেই অগ্রাধিকারের ক্রম ঠিক করা জরুরি।
জৈব বৈচিত্র্য আমাদের দেশ এবং মানুষের অমূল্য সম্পদের উৎস। আমাদের দেশে বিদ্যমান বিপুল জৈব বৈচিত্র্যের সুরক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বের দিক থেকে শীর্ষস্থানের দাবিদার। কেননা, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা পরিচালিত উদারীকরণও বিশ্বায়নের ফলে সৃষ্ট মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ (TRIPs) বিধানের সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আমাদের কৃষিজ জৈব সম্পদ ও প্রাণ সম্পদ প্যাটেন্ট অধিকারের মাধ্যমে লুট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে। এই হুমকির মোকাবিলা এবং বিদ্যমান বিপুল জৈব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার্থে অবিলম্বে জীবনব্যাঙ্ক স্থাপন ও দেশের বিদ্যমান উদ্ভিদ, শস্য ও প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ কৃষি ঐতিহ্যের দেশ। সুদীর্ঘ কালব্যাপী কৃষিকাজের চর্চার মধ্য দিয়ে এ দেশের কৃষকসমাজ যে বিপুল কৃষিজ জ্ঞানকে সংরক্ষিত ও বিকশিত করে চলেছে সে কৃষিজ জ্ঞানগুলোকে মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দস্যুতার হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে। কৃষি সংক্রান্ত ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান সম্পদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য জাতীয় কৃষি নীতিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও কার্যকর কৌশল প্রণয়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
উন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার স্বার্থে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন প্রকার ভর্তুকি, উচ্চ শুল্ক হার, আমদানি কোটাসহ একগুচ্ছ অন্যবিধ রক্ষণশীল পদক্ষেপকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্যমতে, উন্নত দেশগুলোর এই রক্ষণশীলতার অবসান হলে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মোট জাতীয় উৎপাদন একলাফে ৩০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে। উন্নত দেশগুলোর এই কৃষি ভর্তুকি দশক দশক ব্যাপী কৃষি বাণিজ্যসহ বাণিজ্য উদারীকরণের ক্ষেত্রে এমন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে যার ফলে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো বাণিজ্য সুবিধা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্পোন্নত দেশগুলো রফতানি খাতে ভর্তুকি হিসেবে বার্ষিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। গম, ময়দা, পনির, মাখন, পোলট্রি এবং গবাদিপশুর মাংস রফতানিতে এই ভর্তুকি ব্যবহৃত হচ্ছে। বুশ প্রশাসন প্রণীত ২০০২ সালের কৃষি বিলে ১৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে আগামী দশ বছর কৃষি ব্যয় নির্বাহের জন্য। বরাদ্দকৃত এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির অর্থে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সরকারি সংগ্রহ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষিজ উৎপন্নসমূহ কিনে নেওয়া হবে। ফলে বিশ্ববাজারে কৃষি পণ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে সংকুচিত হবে এবং বিপুলসংখ্যক দরিদ্র কৃষককে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে। কৃষি পণ্যের এই অব্যাহত ডাম্পিং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনকেও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

উন্নত দেশগুলো উল্লিখিত পদক্ষেপ ছাড়াও গ্রিন বক্স সহায়তার বিধানকে ব্যবহার করে তাদের কৃষি ভর্তুকি অব্যাহত রাখছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তির বিধান অনুযায়ী যে সকল ভর্তুকি অত্যাবশকীয়ভাবে কমিয়ে আনার শর্ত রয়েছে সেগুলোকে সাধারণ সহায়তা কার্যক্রম থেকে সরিয়ে গ্রিন বক্সে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্যে দিয়ে এই চাতুর্যপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৯৫ সালে কৃষি চুক্তি বাস্তবায়নের ভিত্তি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সমষ্টিভূত কৃষি সহায়তা ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নে। অন্যদিকে গ্রিন বক্স সহায়তা বৃদ্ধি পায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্রিন বক্স সহায়তা কার্যক্রমের সুযোগকে নির্বিচারভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে চলছে উন্নত দেশগুলো। ১৯৯৬ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো গ্রিন বক্স কার্যক্রমে ব্যয় করছে মাত্র ১২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো একই সময়ে ৮৭.৫ শতাংশ গ্রিন বক্স সহায়তা ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশের কৃষি খাতঃ যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা
খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণতা, মোট জাতীয় উৎপাদনের বিপুল অবদান এবং সর্বাধিকসংখ্যক কর্মসংস্থানের উৎস হওয়া সত্ত্বেও দেশের সার্বিক চাহিদা ও কৃষির বর্তমান উৎপাদনের মধ্যে এখনো বিপুল পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। দেশেল প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যের তালিকাটিতে নজর ফেরালে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যের তালিকা (মিলিয়ন টাকায়)


প্রধান দ্রব্যাদি

১৯৯৫-৯৬

১৯৯৬-৯৭

১৯৯৭-৯৮

১৯৯৮-৯৯

১৯৯৯-০০

দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য (অশোধিত)

২১৩৯

২৯০৪

২৫৬৪

২৮০৮

৪০৬৮

চিনি

৪৪৯

২৬০৬

২০১৭

২০০২

১৬০৭

চাউল

১০৫৬৬

১৭৫১

১১১৮২

২৫৭৫৮

৩৩৬৬

গম

৭০০৬

৮৮২৪

৬৮২৬

১৭২০৪

১২৫৩১

তুলা

৬৩২২

৮২৮৬

১০৭৮৪

১২৩১৫

১৪৮৫২

জ্বালানি তেল (অশোধিত)

৬৪৯২

৭৯৭৭

৮০৪১

৭৯৩৮

৭৪১৭

জ্বালানি দ্রব্যাদি

১১৫৩৫

১৬৭০৫

১৫২৮২

১৭৩২৬

২১৬২৬

সার

২৫৯৪

৫৫৪৯

৫০৫৩

৫১৩১

৫৯১৩

সিমেন্ট

৭৮৫৩

৮৯৪১

১০৯৪৭

৯১৮৪

৯১২৫

ভেষজ তেল

১৩২৯৬

১৯২১৮

৯৭৯৩

১৩৫৪৮

২৬১৪৯

লৌহ ও ইস্পাত

১০৩৫৪

১৬৮২০

১৭৬২১

১৭৮৪২

১৬৪৪৩

প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি

৩২০৮৩

৪১৪৮৫

৪১৯৬৪

৩৯৮২৬

৪২৮১০

বস্ত্র তৈরির সুতা (সুতি, কৃত্রিম)

১৫০৮১

২৮৬৭০

১৭৮৮৯

১২৪৮২

৫৮৪৫

বস্ত্র (সুতা এবং কৃত্রিম)

৩১২১৬

১০২২৪

৪১৫৪১

৩৭১২০

৩৫০২৮

তথ্য সূত্রঃ ফরেন ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্স অব বাংলাদেশ ১৯৯৯-২০০০, ভলিউম-২

দেশের প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের এই তালিকায় উল্লিখিত কৃষিপণ্যগুলোর মোট আমদানি ব্যয় একই সময় আমদানিকৃত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদির মোট ব্যয়ের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়। কৃষিপণ্য আমদানির এই পরিমাণ দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের সুতা ও বস্ত্র আমদানির মোট পরিমাণের চেয়েও বেশি।

১৯৯৫-৯৬ থেকে ১৯৯৯-০০ এই পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেলেও দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, চিনি, গম, তুলা, সার ও ভোজ্য তেলের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত বাস্তবভাবে অনুধাবন করা যায় যে, দেশে কৃষির অগ্রগতির বিষয়টি এখনো পর্যন্ত একটি সুষম উন্নয়নের ভিত্তি ভূমির ওপর দাঁড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশের গৃহীত কৃষি নীতিতেও এর প্রতিফলন চোখে পড়বে। কৃষিনীতির ভূমিকায় বলা হয়েছে ‘সার্বিকভাবে কৃষির আওতায় ফসল উৎপাদন, মৎস্য, পশুসম্পদ, পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হলেও ইতোমধ্যে মৎস্য, পশুসম্পদ, পরিবেশ ও বনবিষয়ক পৃথক নীতিমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষি মন্ত্রণালয় সার্বিক কৃষির সর্ববৃহৎ খাত হিসেবে ফসল সংশ্লিষ্ট যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঠিক দিকনির্দেশনামূলক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সঙ্গত কারণেই এতে ফসল উৎপাদন, বিপণন এবং উৎপাদনের চালিকাশক্তি হিসেবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন, বীজ, সার, কৃষি ঋণবিষয়ক নীতিমালা প্রাধান্য পেয়েছে। যেহেতু, বাংলাদেশের কৃষিতে ফসল খাতই এখনো মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে এবং কৃষি উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় সরকারি কর্মকাণ্ডে এ খাতটি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে, সেহেতু ফসল খাতের উন্নয়নবিষয়ক নীতিমালাকে ‘জাতীয় কৃষিনীত’ নামে অভিহিত করা হলো। একটি ব্যাপক উৎপাদন ক্ষেত্রকে পৃথকীকরণ, পৃথক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদানের ফলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অথবা আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন না করার আশঙ্কা বিদ্যমান থাকে। ফসল খাতের তুলনায় দেশের মৎস্য, পশুসম্পদ বা বনজ খাতের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনা করলে আশঙ্কাটি আরো জোরদার হয়ে ওঠে। জাতীয় কৃষিক্ষেত্রে টেকসই ও কার্যকর উন্নয়ন সম্ভব করে তোলার জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয় (মৎস্য ও পশুসম্পদ, বন ও পরিবেশ) ও সংস্থাকে একযোগে কাজ করার মধ্যে দিয়ে একটি সমন্বিত ও বহুমুখী জাতীয় কৃষি উন্নয়ন কৌশল প্রবর্তন করতে হবে, যার মাধ্যমে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জনকে সম্ভব করে তোলা যাবে। এই সমন্বিত ও বহুমুখী কর্মকৌশলের অন্তর্ভুক্ত হবে বিশ্বায়ন ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তিসহ আরও বিভিন্ন আইন-কানুন, যেগুলো কৃষিতে প্রভাব ফেলতে পারে (যেমন, বাণিজ্য সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ চুক্তি) সেগুলোকে মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন ও এর বহুমুখী প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

উন্নত দেশগুলোর কৃষি খাতে অব্যাহত ভর্তুকি এবং উদ্বৃত্ত কৃষিজপণ্য আমাদের মতো দেশগুলোর বাজারে অবারিতভাবে ডাম্পিংকে মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন করা অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর আগ্রাসী নীতির মোকাবিলা এবং নিজেদের কৃষি সুরক্ষার স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে হলে আমাদের দেশেও দরিদ্র কৃষকদের উৎপাদন সহায়তা, ফসলের ন্যায্য মূল্যে নিশ্চিতকল্পে মূল্য সহায়তা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় কৃষিজ উৎপণ্যের স্থানীয় মজুদ গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান, জীবন ব্যাংক স্থাপন এবং দেশীয় উদ্ভিদসহ মূল্যবান কৃষিজ প্রজাতিগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষিজপণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রফতানি সহায়তা প্রদানের মতো বিষয়গুলোকে জাতীয় কৃষি উন্নয়ন কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কৃষির উন্নতিরই কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বাধিক কার্যকর অবদান রাখতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ
১। গ্যাট, উরুগুয়ে রাউন্ড ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা, ইনসিডিন বাংলাদেশ-১৯৯৮
২। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাঃ কৃষি চুক্তি, ইনসিডিন বাংলাদেশ, ২০০২
৩। WEB-SITE, Ministry of Agriculture, GOB
৪। জাতীয় কৃষি নীতি, কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
৫। Briefing paper on Agreement on Agriculture, Law and Society Trust Srilanka
৬। Foreign Trade Statistics of Bangladesh, 1997-2000
৭। OXFAM Briefing paper Running into the sand watkings kevin, August-2003

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং ইনসিডিন বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইনসিডিন বাংলাদেশের এডভোকেসি চিফ নাসিমুল আহ্‌সান বার্তাপত্রটি প্রস্তুত করেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইনসিডিন বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সম্মত কার্যবিবরণীর আওতায় প্রস্তুত বার্তাপত্র থেকে সংকলিত

২টি মন্তব্য: