সামগ্রীকভাবেই যে কোন ফসলের ভাল বীজ উৎপাদন করা তা উৎপাদনের তুলনায় অধিক দক্ষতা ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। আর বীজ উৎপাদনের বেলায় তা যদি সবজি বীজ উৎপাদন হয় তাহলে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনোযোগী, বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ও সর্বপরি দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। সবজি ফসল উৎপাদনে নিবিড় পরিচর্য্যার প্রয়োজন। আর ভাল গুনগত মানসম্পন্ন সবজি বীজ উৎপাদন করতে হলে সেই পরিচর্য্যার পাশাপাশি আরও কিছু অতিরিক্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক যা নিম্নে দেয়া হলো-
১। নির্দিষ্ট জাতের পরিচয়গত বৈশিষ্ট্যসমূহ জানা
২। ঐ জাতের প্রজনন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা
৩। নির্দিষ্ট জাতের প্রয়োজনীয় আবহাওয়া ও বপন/রোপন সময় সম্পের্কে জ্ঞান
৪। সবজিভেদে পরিচর্য্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান
৫। স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বা সময় সম্পর্কে জানা
৬। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিয়নিত্রত পরাগায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান
৭। অর্নিধারিত গাছ বাছাইকরণ পদ্ধতি ও সময় সম্পর্কে জানা
৮। নির্দিষ্ট জাতের বীজ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের কার্যকর দমন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান
৯। সঠিক সময়ে পরিপক্ক বীজ ফসল কর্তন/সংগ্রহ করার পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা একান্ত অপরিহার্য।
জলবায়ু ও মাটি
টমেটো এদেশে শীতকাশীন ফসল। উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা টমেটো গাছে রোগ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিকরে। আবার উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুল ঝরে পড়ে। রাত্রির তাপমাত্রা ২৩০ সেঃ এর নীচে থাকলে তা গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশী উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০০-২৫০ সেঃ টমেটোর ভাল ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দোঁআশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোঁআশ থেকে এটেল দোঁআশ সব মাটিতেই টমেটো ভাল জন্মে। বন্যার সময় পলি জমে এমন জমিতে এর ফলন সরচেয়ে ভাল হয়। মাটির অ্ম্লতা বেশী হলে জমিতে চুন প্রয়োগ করা উচিত।
জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা উদ্ভাবিত টমেটোর উন্মুক্ত (OP) জাত গুলির সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট নিম্নে দেয়া হলো-
বারি টমেটো-২ (রতন): ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৩: ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৪: ফলের ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম। ফলন ৬০-৭০ কেজি/শতাংশ গ্রীষ্মকালীন জাত।
বারি টমেটো-৫: ফলের ওজন ৪০-৫০ গ্রাম। ফলন ৬০-৭০ কেজি/শতাংশ গ্রীষ্মকালীন জাত।
বারি টমেটো-৬ (চৈতী: ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৭ (অপূর্ব): ফলের ওজন ১৪৫-১৫৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৮ (শিলা): ফলের ওজন ১০০-১১৫ গ্রাম। ফলন ৩৫০-৪০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-৯ (লালিমা): ফলের ওজন ৭৫ গ্রাম। ফলন ৩৩০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১০ (অনুপমা): ফলের ওজন ২৫-৩০ গ্রাম। ফলন ১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা): ফলের ওজন ৮-১০ গ্রাম। ফলন ১৫০-১৮০ কেজি/শতাংশ এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ৬০-৯০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১২ (সিঁদুর): ফলের ওজন ৮০-৮৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ।
বারি টমেটো-১৪: ফলের ওজন ৯০-৯৫ গ্রাম। ফলন ৩৪০-৩৫০ কেজি/শতাংশ। আগাম শীত ও গ্রীষ্মের শুরূতে চাষযোগ্য। ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধী। ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত টমেটো সংগ্রহ করা যায়।
টমেটোর কয়েকটি উলেৱখযোগ্য জাতের ছবি নিম্নে দেয়া হলো-
চিত্রঃ বারি টমেটো-৯ চিত্র: বারি টমেটো-১১
জীবনকালঃ জাতভেদে ১২০-১৫০ দিন।
বীজ বপনের সময়ঃ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।
বীজের হারঃ প্রতি হেক্টরে ২০০ গ্রাম (১গ্রা/শতাংশ)।
চারা উৎপাদন পদ্ধতি
সবল চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে ৫০ গ্রাম সুস্থ বীজ ঘন করে প্রতিটি বীজতলায় (১মি×৩মি) বুনতে হয়।
এই হিসেবে প্রতি হেক্টরে ২০০গ্রাম (১গ্রাম/শতাংশ) বীজ বুনতে (গজানোর হার 80%) ৪ টি বীজতলার প্রয়োজন।
গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় ৪.৪ সেমিঃ দূরত্বে স্থানান্তর করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে টমেটো চাষের জন্য এরূপ ২২টি বীজতলার প্রয়োজন হয়।
বীজতলায় ৪০-৬০ মেস (প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০ টি ছিদ্র যুক্ত) নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উপোদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছি পোকার দ্বারা পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ ছড়ানোর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এরূপ সুস্থ সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপণ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে পলিথিন ও চাটাই এর আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে।
জমি তৈরি
টমেটোর ভাল ফলন অনেকাংশেই জমি তৈরির উপর নির্ভর করে। তাই ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১মি: চওড়া ও ১৫-২০ সেমি উচুঁ বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া নালা করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিস্কাশনের সুবিধা হয়।
সার প্রয়োগঃ নিম্ন বর্ণিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
সারের নাম | মোট পরিমাণ | মোট পরিমাণ | জমি তৈরীর সময় | ১ম উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ১০ দিন পর) | ২য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ২৫ দিন পর) | ৩য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ৪০ দিন পর) | ||||
হেক্টর প্রতি | শতাংশ প্রতি | হেক্টর প্রতি | শতাংশ প্রতি | হেক্টর প্রতি | শতাংশ প্রতি | হেক্টর প্রতি | শতাংশ প্রতি | |||
পঁচা গোবর | ১০ টন | ৪০ কেজি | ১০ টন | ৪০ কেজি | - | - | - | - | - | - |
ইউরিয়া | ৩০০ কেজি | ১২০০ গ্রাম | - | - | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম |
টিএসপি | ১৭৫ কেজি | ৭০০ গ্রাম | ১৭৫ কেজি | ৭০০ গ্রাম | - | - | - | - | - | - |
এমপি | ১৫০ কেজি | ৬০০ গ্রাম | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম | - | - | ২৫কেজি | ১০০ গ্রাম | ২৫ কেজি | ১০০ গ্রাম |
উপরের মাত্রায় গোবর ও রাসায়নিক সার শেষ চাষের আগে জমিতে ভাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। উপরি প্রয়োগের ইউরিয়া এবং এমপি সার গাছের গোড়ার ১০-১৫ সেমি দুরে দিয়ে মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণ
চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন অথবা ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম এবং লাগানোর পর গোড়ায় হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
এক মি চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব ৬০ সেমি এবং সারিতে চারা থেকে চারা ৪০ সেমি দুরত্বে লাগাতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
সেচ ও নিষ্কাশনঃ চারা রোপনের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিত চওড়া (৩০-৪০সেমি) এবং এক দিকে সমান ঢালু হওয়া বাঞ্চণীয়।
মালচিং: প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
আগাছা দমনঃ টমেটোর জমিকে প্রয়োজনীয় নিড়ানী দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সার উপরি প্রয়োগঃ সময়মত বর্ণিত মাত্রায় প্রয়োজনীয় সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষ পরিচর্যাঃ ১ম ফুলের গোছার ঠিক নীচের কুশিটি ছাড়া নীচের সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে।
পোকা ও রোগবালাই দমন
পোকামাকড়
সাদা মাছি পোকা
এরা পাতার রস চুষে খায় বলে পাতা কুঁকড়ে যায়।
এদের আক্রমণে পাতার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা বা হলদে দাগ দেখা যায়। পরে অনেক দাগ একত্রে মিশে সবুজ শিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যায়।
সাদা মাছি পোকার নিম্ফ রস খাওয়ার সময় এক ধরণের আঠালো মধুর মত রস নিঃসরণ করে। এ রস পাতায় আটকে গেলে তাতে সুটি মোল্ড নামক এক প্রকার কালো রং এর ছত্রাক জন্মায় ফলে গাছের সালোকসংশেৱষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।
হলুদ পাতা কোকড়ানো ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
সহনশীল জাত যেমন বারি উদ্ভাবিত টিএলবি ১৩০, টিএলবি ১৮২ চাষ করা।
এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।
বীজতলা মশারীর নেট দিয়ে ঢেকে রাখা।
হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা।
আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি পরিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এস এল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি পরিমাণ) মিশিয়ে স্প্রে করা। তবে ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে এ পোকা কীটনাশকের প্রতি দ্রুত সহনশীলতা গড়ে তোলে।
রোগবালাই
ড্যামিপং অফ
ছত্রাকজনিত কারণে চারার গোড়ায় পানিভেজা দাগ হয়ে পচে যায়। অনেক সময় শিকড় পচে ও চারা মারা যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
মুরগীর বিষ্ঠা/সরিষার খৈল বীজ বপনের তিন সপ্তাহ আগে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড (০.২%) দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
ঢলেপড়া রোগ
গাছের যে কোন বয়সে এ রোগ দেখা যায়।
আক্রান্ত গাছ যে কোন সময় ঢলে পড়ে যায়।
পুরো গাছটি দ্রুত মারা যায় ও ফলন কম হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে ধ্বংস করা।
রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা।
বন বেগুন যথা টরভাম ও সিসিমিব্রফলিয়ামের সাথে জোড় কলম করা।
নাবী ধ্বসা/মড়ক
টমেটো গাছের পাতাতে কালো কালো দাগ দেখা যায় যা পানিতে ভিজা ভিজা মনে হবে।
আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা রংয়ের ছাতা (ছত্রাকজালি) পড়ে থাকতে দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা বা কান্ডে তুলার মত ছত্রাকজালির আবরণ দেখা যায়।
আক্রান্ত জমি থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়।
শেষ অবস্থায় এসে পাতা, কান্ড, শাখা সবই আক্রান্ত হয়ে গাছগুলো দেখতে সম্পূর্ণ পুড়ে যাবার মত মনে হবে।
দমন ব্যবস্থাপনা
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অথবা ঘন কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ৩-৪ দিনের বেশী চলতে থাকলে দেরী না করে ছত্রাকনাশক যেমন-রিডোমিল গোল্ড বা ম্যানকোজেব ব্যবহার করা। ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১ম বার স্প্রে করার ৩ দিন পর ২য় বার স্প্রে করতে হবে।
আক্রান্ত বছরের ফসল সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
হলুদ পাতা কুঁকড়ানো
পাতার কিনারা থেকে মধ্যশিরার দিকে গুটিয়ে যায়।
পাতা খসখসে হয়ে শিরাগুলো স্বচ্ছ হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। পাতা পীতবর্ণ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়।
আক্রান্ত গাছের ডগায় ছোট ছোট পাতা গুচ্ছ আকার ধারণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
চারা লাগানোর এক সপ্তাহ পর থেকে ৭-১০ দিন পরপর এডমায়ার নামক বিষ প্রয়োগ করে সাদা মাছি পোকা দমন করতে হবে।
টমেটোর জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে।
ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত (প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৪০-৬০ টি ছিদ্র) নাইলনের নেট দিয়ে বীজতলা ঢেকে চারা উৎপাদন করতে হবে।
ফল সংগ্রহের দুই সপ্তাহ আগেই স্প্রে বন্ধ করতে হবে।
বীজ উৎপাদনের জন্য করণীয় কাজগুলো
রোগিং: পাতার রং, আকার, আকৃতি, গাছের উচ্চতা, ফলের রং, আকার, আকৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কোন গাছ ভিন্নতর মনে হলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলতে হবে। টমেটো বীজ ফসলের মাঠ কমপক্ষে ৩ বার পরিদর্শন করতে হবে। ফুল আসার আগে প্রথম পরিদর্শন, ফুল আসা ও ফল ধরার সময় দ্বিতীয় পরিদর্শন এবং ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় তৃতীয় পরিদর্শন করতে হয়।
পরাগায়নঃ টমেটো একটি স্বপরাগায়িত ফসল হলেও ২-৫% পরপরাগায়ন ঘটে থাকে। বীজ ফসলের জমি অন্য জাতের জমি থেকে ৫০ মিটার দূরত্ব রাখলে বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন হবে।
বীজ ফল চিহ্নিতকরণ ও সংগ্রহঃ রোগাক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্থ বা পঁচা ফল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সুস্থ স্বাভাবিক ফল বীজের জন্য বাছাই করে আলাদাভাবে সংগ্রহ করতে হবে। ফলের রং গাঢ় লাল হলেই ফল সংগ্রহ করা উচিত। অতপর সংগ্রহকৃত ফলগুলো ২-৩ দিন রেখে দিতে হয়।
বীজ সংগ্রহ ও শুকানোঃ বাছাইকৃত ফলগুলো, আড়াআড়িভাবে কেটে মাটি অথবা প্লাষ্টিক পাত্রের উপর হাত দিয়ে চেপে বীজ বের করে নিয়ে ২০০-২১০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২৪-৩৬ ঘন্টা ফারমেনটেশনে রাখতে হবে। এ সময়ে মাঝে মাঝে বীজ নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে বীজগুলো সহজে ফলের আঠালো অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের পরে বীজগুলো বারবার পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ভাসমান বীজ বাতিল করতে হবে। বীজ ভালভাবে ধোয়ার পর প্রথমে ছায়ায় পরে ক্রমান্বয়ে প্রখর রৌদ্রে অধিক্ষণ শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ৮% এ নামিয়ে আনতে হবে।
বীজ ফলন: হেক্টর প্রতি ১৫০-১৬০ কেজি (৬০০-৬৪০ গ্রাম/শতক) পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন